ক্ষমতাসীন সরকারের পতনের দিন গণনা শুরু হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের মুক্তিকামী জনতা মাফিয়াদের পতনের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছে। শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেছেন, ‘নিশিরাতের সরকারের পতনের দিনগণনা শুরু হয়েছে। দেশের মুক্তিকামী জনতা মাফিয়াদের পতনের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছে। এ কারণে জনবিচ্ছিন্ন ভোটারবিহিন ব্যর্থ সরকার অস্থির বেপরোয়া উঠেছে। এখন একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারের অন্তিম সময়ের বিষাদের সুর বাজছে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে যারা সমালোচনা করছেন তাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য বহুমাত্রিক নীলনক্শা করছে। রাজারবাগ-বেইলীরোড-গণভবনকে কাশিমবাজার কুঠিতে পরিণত করা হয়েছে। প্রতিদিন সেখানে বিরোধী দল-মত নিশ্চিহ্ন করে ভোট ডাকাতি সফল করার কলাকৌশল নিয়ে বৈঠক চলছে। পুলিশে এবং প্রশাসনে রাজনৈতিক রদবদল চলছে। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, “সামনে অনেক বড় সংকট আসছে। সেই সংকট মোকাবেলা করতে ইউনিফর্মধারী পুলিশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।”
রিজভী প্রশ্ন রাখেন- কিসের সংকট আসছে? কেন সংকট? দেশের জনগণ জানতে চায়। তার মানে শেখ হাসিনার নির্দেশে সংকট তৈরির কারিগররা সংকট নাটকের স্ক্রিপ্ট ইতোমধ্যে লিখে ফেলেছে, যার কিছু কিছু আলামত দেখা যাচ্ছে গায়েবী মামলা আর গণগ্রেফতারের মধ্য দিয়ে। প্রশাসনের দলবাজদের বলবো-এখনো সময় আছে আপনারা জনগণের পাশে থাকুন। ক্ষমতাসীন দলের দালালি, মোসাহেবী করবেন না। কোন সরকারই চিরস্থায়ী নয়। কর্তৃত্ববাদী, ধুরন্ধর, গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের হয়ে আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার হরণের যন্ত্র হিসেবে কাজ করবেন না। নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকারের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে আপনারা প্রতিনিয়ত গণধিকৃত হচ্ছেন। অতিদ্রুতই সকল অনাচার ও অপকর্মের জন্য নিশিরাতের সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, অবৈধ আওয়ামী নাৎসী সরকার গায়ের জোরে সবকিছু করতে গিয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে। এখন কিছুই সামাল দিতে পারছে না। ডলার সংকটে যখন দেশের জনগণ উদ্বিগ্ন, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। অথচ, শেখ হাসিনা তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষমতায় থাকার লোভে জনগণকে দমন করে গণতন্ত্রকামী বিশ^ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য মন্তব্য গণতন্ত্রকামী মানুষের মনে চিন্তার উদ্রেক করেছে। আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনা কি কারণে আমেরিকা সম্পর্কে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন এটি কারো কাছে বোধগম্য নয়। তাঁর প্রতিহিংসামুলক কথাবার্তায় বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছে এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। যেভাবেই হোক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে জোর করে ক্ষমতায় থাকার পরও তার মধ্যে রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণাবলীর অভাবের কারণে প্রতিদিনই তিনি একজন ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ ঝগড়াটে রমণীর রূপে অভির্ভূত হচ্ছেন দেশবাসীর সামনে। এ বিষয়টি ছোট করে দেখার উপায় নেই। কেন শেখ হাসিনা অবিরাম মিথ্যাচার করে চলেছেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মুখোমুখো দাঁড় করে দিচ্ছেন এসব আর ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাধিকবার বলেছেন, ‘অপশক্তি শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার লোভে দেশের জনগণের আত্মমর্যাদা ও গৌরবকে পরিকল্পিতভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা সার্বভৌমত্ব দুর্বল করেছে, স্বাধীনতাকে বিপন্ন করেছে, গণতন্ত্রকে নিরুদ্দেশ করেছে। এরা তাদের নিজেদের প্রহসনের নির্বাচনেও স্বস্তি পায় না। উচ্চ আদালত হিরো আলমের প্রার্থিতা বৈধতার রায় দিলেও নির্বাচন কমিশন জনবিচ্ছিন্ন সরকারের ইশারায় আলমের প্রার্থিতা বাতিল করেছে। এই তামাশার নির্বাচনের মধ্যেও অবৈধ সরকারের অনৈতিক চাপ দৃশ্যমান। এরা গণতন্ত্রের সকল স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা তাঁর পরিবার নিয়ে সুইজারল্যান্ড সফরের পরপরই দেশী বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবর বেরিয়েছে-সুইস ব্যাংকগুলোতে রাখা বাংলাদেশীদের সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এটা নিয়ে রহস্য ঘনিভূত হচ্ছে। এই টাকাগুলো এক বছরে কারা সরিয়েছে ? এটি একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে মানুষের মনে। কারণ একচেটিয়া টাকা পাচারের সাথে যারা জড়িত তারা সবাই ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ। আওয়ামী লুটেরারাই যে সুইস ব্যাংক থেকে সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকা সরিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ভয়াবহ ডলার সংকটের সময়ে বিশাল বহর নিয়ে শেখ হাসিনার ঘন ঘন বিদেশ সফর এবং সম্প্রতি সুইজারল্যান্ড সফর খুবই রহস্যজনক। সফর করে ফিরে এসে তাঁর কথাবার্তাও রহস্যজনক।
তিনি বলেন, উৎসাহ, উদ্যম, প্রয়াস, অনমনীয় মনোবল ও আত্মত্যাগ কখনোই বৃথা যায় না। লুন্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করবে, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবে। মাফিয়া সরকারকে আর সময় দেয়া যাবে না। রাজপথ দখলের জন্য সকলকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আওয়ামী লীগের জমিদারী শাসনের দিন শেষ। দেশের জনগণ এখন রাগ-ঘৃণা ও প্রতিবাদের আগ্নেয়গিরি হয়ে আছে। শেখ হাসিনার অনাচার চলতে থাকলে যেকোন সময় প্রতিশোধের অগ্ন্যুৎপাতের মহাপ্লাবন বয়ে যাবে।
বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, আওয়ামী নাৎসী সরকার অবৈধভাবে দেশ দখল করলেও জনগণের ভয়ে সবসময় তটস্থ থাকে। সেজন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও তাদেরকে গায়েবী মামলার নাম দিয়ে কারান্তরীণ করে রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাইফুল আলম নীরব, রফিকুল আলম মজনু, মোনায়েম মুন্না, এস এম জাহাঙ্গীর, গোলাম মাওলা শাহীন, কমিশনার হারুনুর রশিদ, মির্জা কালু, মোসাব্বির হাইকোর্ট থেকে সকল মামলায় জামিন পাবার পরও ব্যাক ডেট দিয়ে পেন্ডিং মামলায় নাম জড়িয়ে তাদের কারামুক্তি বিলম্ব করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই তাদের কাউকে না কাউকে রিমান্ডে আনা হচ্ছে। রফিকুল আলম মজনু, সাইফুল ইসলাম নীরব, মুন্না ও শাহীনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে দু’একদিন পরপরই রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। এটি আওয়ামী নাৎসী শাসনের জুলুমের এক বিভৎস রুপ। সরকার নিজেদের গদিকে নিরাপদ করার জন্যই উল্লিখিত নেতৃবৃন্দকে কারাগারে আটকিয়ে রাখছে। আমি উল্লিখিত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহবান জানাচ্ছি।