থাইল্যান্ডের মেডিকেল কর্মীদের দেওয়া চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেকের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের একটি গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে ফাঁস হয়ে যাওয়া এই নথিতে সিনোভ্যাকের দুই ডোজ নেওয়ার পরও থাই মেডিকেল কর্মীদের বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা দেওয়ার পরামর্শ রয়েছে।

একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে সিনোভাক বায়োটেকের ভ্যাকসিনের প্রতি জনসাধারণের আস্থা হ্রাস পেতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। গোপন এই নথি ফাঁসের পর দেশটিতে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ এই স্মারকে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার ব্যাপারে নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। আর এই গোপন নথিটি স্থানীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল ফাঁস হয়ে যাওয়া গোপন নথির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নথিতে দেশটির অজ্ঞাত এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন না দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন যে কার্যকর নয় তা স্বীকার করা হবে।

সিনোভ্যাক বায়োটেকের তৈরি করোনাভ্যাক একটি নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিন। থাইল্যান্ডের বেশিরভাগ স্বাস্থ্য কর্মীকে এই টিকা দেওয়া হয়েছে। রিয়্যাল ওয়ার্ল্ড স্টাডিতে দেখা গেছে, সিনোভ্যাকের দুই ডোজ টিকা করোনার গুরুতর উপসর্গ এবং মৃত্যুর হার হ্রাসে ৯৫ শতাংশ কার্যকর। এছাড়া আলফা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে ভ্যাকসিনটি ৭১ থেকে ৯১ শতাংশ কার্যকর।

তবে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে থাইল্যান্ডে ফাঁস হওয়া নথির বিষয়ে মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও সিনোভ্যাক কোনও সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ফাঁস হয়ে যাওয়া নথির সুপারিশের কারণে থাইল্যান্ডের প্রখ্যাত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি মেডিকেল কাউন্সিলের শীর্ষ এক কর্মকর্তা দেশটির স্বাস্থ্য কর্মীদের বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

থাইল্যান্ডে টুইটারে হ্যাশট্যাগে ‌‘মেডিকেল কর্মীদের ফাইজারের টিকা দিন’ ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। সোমবার এই হ্যাশট্যাগে দেশটিতে ৬ লাখ ২৪ হাজারের বেশি টুইট করা হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওপাস কার্নকাউইনপং সাংবাদিকদের বলেছেন, নথিটি সত্য নয়। কিন্তু তার এই দাবি স্বাস্থ্যমন্ত্রী আনুতিনের মন্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আনুতিন বলেছেন, বুস্টার ডোজ দেওয়ার সুপারিশটি কেবলমাত্র মতামত। দেশে ভ্যাকসিনের নীতি নির্ধারণের জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেল রয়েছে। তিনি বলেছেন, সিনোভ্যাকের দুই ডোজ কার্যকর। নির্ধারিত মানদণ্ডের তুলনায় ভালো ফলও পাওয়া গেছে।

এদিকে, থাই বিশেষজ্ঞরা দেশের মানুষের অধিক সুরক্ষায় করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এশিয়ার এই দেশটি মূলত অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিনের ওপর নির্ভর করেছে। তবে মডার্নার এমআরএনএ ভ্যাকসিনও দেশে সহজলভ্য হবে বলে জানিয়েছে থাই সরকার।

ভবিষ্যতে বিতরণের জন্য ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিনের ২ কোটি ডোজ সংগ্রহ করেছে থাইল্যান্ড। চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের উপহারের আরও ১৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশটিতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞরা ৬০ বছরের নিচের জনগোষ্ঠীর শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন কার্যকর বলে দেখতে পেয়েছেন। তবে ভ্যাকসিনটির মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকির ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।