স্বল্পমেয়াদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক অর্থায়নে সুদহার নির্ধারণ বিষয়ে নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থা থেকে লাইবর (লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফারড রেট) হার প্রত্যাহারের পরে স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক অর্থায়নে বিকল্প সূচক হারের প্রয়োগ বিষয়ে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।

সোমবার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী বা অনুমোদিত (অথরাইজড) ডিলার ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এর আগে ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর এ বিষয়ে একটি খসড়া নীতিমালা জারি করা হয়েছিল। অংশীজনদের সঙ্গে দীর্ঘ সময়ব্যাপী আলোচনা করে পরামর্শ ও মতামত নেওয়া হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে লাইবর ব্যবস্থা প্রত্যাহারের আগে এ বিষয়ক নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে বেঞ্চমার্ক হার হিসাবে লাইবরের প্রয়োগ ২০২১ সাল থেকে প্রত্যাহার করা হবে।

লাইবর এ সূচক ঘোষণা সম্পূর্ণরূপে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে প্রত্যাহার করা হবে। তবে ২০২২ সালের পরে অর্থায়নের সুদহার নির্ধারণে লাইবরের পরিবর্তে নতুন বেঞ্চমার্ক হারের প্রয়োগ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে লাইবর প্রত্যাহারের আগে লাইবর ভিত্তিতে গৃহীত সব ধরনের অর্থায়নের সুদ নতুন বেঞ্চমার্ক রেটে স্থানান্তর করতে হবে।

বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী, স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নে ৬ মাসভিত্তিক লাইবরের সঙ্গে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ মার্কআপ যুক্ত করে বার্ষিক সুদহার নির্ধারিত হয়।

সার্কুলারে লাইবরের পাশাপাশি যে মুদ্রায় অর্থায়ন করা হবে সে মুদ্রায় প্রযোজ্য বেঞ্চমার্ক হারের সঙ্গে নির্দেশিত মার্কআপ যুক্ত করে রপ্তানি বিল ডিসকাউন্টিং কিংবা মেয়াদপূর্তির আগেই রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিমুক্ত বেঞ্চমার্ক রেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে মার্কআপ ৩ দশমিক ৫০ শতাংশের ওপর বার্ষিক ২ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে ঝুঁকি প্রিমিয়াম যোগ করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

নতুন নীতিমালায় ৬ মাসের নির্ধারিত মেয়াদের পরিবর্তে অর্থায়নের সময়কালের ভিত্তিতে বেঞ্চমার্ক হার প্রয়োগের সুবিধা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মেয়াদভিত্তিক (যেমন-৩ মাস/৬ মাস মেয়াদি) বেঞ্চমার্ক হারের অনুপস্থিতিতে রপ্তানি বিলের বিপরীতে অগ্রিম মূল্য পরিশোধের তারিখের আগে সংশ্লিষ্ট সময়কালের কম্পাউন্ডিং পদ্ধতিতে আগাম সুদহার হিসাবায়ন করা যাবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি শরিয়াহভিত্তিক অর্থায়নে প্রচলিত ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক হার প্রয়োগ করা যাবে।

খসড়া নীতিমালায় বায়ার্স/সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় গৃহীত স্বল্পমেয়াদি আমদানি অর্থায়নের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। আমদানি বাণিজ্যেও অর্থায়নের ক্ষেত্রে মেয়াদভিত্তিক (যেমন-৩ মাস/৬ মাস মেয়াদি) বেঞ্চমার্ক হারের অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সময়কালের জন্য কম্পাউন্ডিং পদ্ধতিতে বকেয়াভিত্তিক সুদহার হিসাবায়ন করা যাবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে।

একই সঙ্গে লাইবর প্রত্যাহারকালীন আগে এ সংক্রান্ত গৃহীত ঋণ বিদেশি ঋণদাতার সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে মুদ্রাভিত্তিক বেঞ্চমার্ক রেটে ওই ঋণ রূপান্তর করা যাবে। নীতিমালায় লাইবর রহিতকরণের সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হওয়ার পর লাইবর ভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবস্থা থেকে অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংককে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।