প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দীর্ঘ সংগ্রামের পরই আজকের এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। তিনি বলেন, স্বাধীনতার চেতনা, আত্মত্যাগ ব্যর্থ হতে পারেনা, ব্যর্থ হতে দেবোনা। বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলবো। আজকের বাংলাদেশ, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সংবিধানের প্রতিটি অধিকার মানুষের যেন নিশ্চিত হয় সেইভাবে কাজ করেছি বলে জানান তিনি।
রোববার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ-সমাপনী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন পাঁচটি প্রকল্প/কর্মসূচির আওতায় নির্মিত ভবন ও জিইএমএস সফটওয়্যার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সবচেয়ে বড় কথা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, তারা (জনগণ) রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে কাজ করে যে অর্থ উপার্জন করে সে উপার্জনের টাকা দিয়ে আমাদের সবার সবকিছু চলে। এ কথা আমাদের ভুললে চলবে না। সব সময় মাথায় রাখতে হবে এ যে খেটে খাওয়া মানুষ তাদের কষ্টের ফসলটাই আমরা ভোগ করি।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণকে কীভাবে আমরা সহযোগিতা করতে পারি সেটাই আমাদের দেখতে হবে।
নবীন অফিসারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের টেনিউর (সরকারের মেয়াদ) শেষ। তারপর আবার ইলেকশন হবে, জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয় আসব, নইলে ঠিক আছে, তাছাড়া বয়স হয়ে গেছে।
দেশের ভেতরেও শত্রু আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের শত্রু দেশের বাইরে থেকে আসা লাগে না, দেশের ভেতরেও আছে। মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী বা ৭৫-এর খুনি, তারা ও তাদের আওলাদ যারা আছে এরা কখনও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেবে না। বাধা দেবে। সেই শত বাধা অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং এগিয়ে যাব।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আমরা দুই বোন বিদেশে ছয়টি বছর রিফিউজি হিসেবে থেকেছি। আমরা আমাদের আপনজন হারিয়েছি, কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ হারিয়েছিল তাদের সব ভবিষ্যৎ। উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষা, ক্ষুধা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ সবই হারিয়েছিল। কারণ তখন হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল শুরু হয়। ছয় বছর পর আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দলীয় সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আমি সিদ্ধান্ত নিই দেশে ফিরে আসব। আমার মেয়ে তখন মাত্র ৮ বছর বয়সী আর ছেলের তখন ১০ বছর। তাদেরকে মাতৃস্নেহ বঞ্চিত করে আমি ফিরে এসেছিলাম দেশের মানুষের কাছে। আমি সেই দেশে ফিরে এসেছিলাম যেখানে আমার বাবা-মায়ের হত্যার বিচার হয়নি, বিচার করা যাবে না। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে অপরাধীদের রেহাই দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে হত্যার পর যে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিলেন, সে জিয়াউর রহমান। তিনি আমার ছোট বোনের পাসপোর্টটাও রিনিউ করতে দেয়নি। আমরা ১৯৮০ সালে লন্ডনে জাতির পিতার হত্যার বিচার চেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। সেই কমিটি ঢাকা আসতে চেয়েছিল, জিয়াউর রহমান তাদের ভিসাও দেয়নি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালে আমি শুধু দেশে ফিরে আসি একটি লক্ষ্য সামনে রেখে, সেটি হলো এ দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন করা। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। মৃত্যুকে সামনে থেকেও দেখেছি। কিন্তু ভয় পাইনি। কারণ ছোটবেলা থেকেই আমি আমার বাবাকে দেখেছি। তার সঙ্গে দেখা হতো আমার কারাগারে। কলেজে থাকতেও বাবাকে কারাগারে গিয়ে দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেও তাকে কারাগারে গিয়ে দেখতাম। এক টানা দুই বছর তিনি কখনও কারাগারের বাইরে ছিলেন না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও বলেন, ‘শেখ মুজিবের বাংলাদেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। আমরা প্রতিটি গ্রামকে সুন্দর করে সাজাব। বাংলাদেশ আজ বদলে গেছে। আজ বাংলাদেশকে কারও কাছে হাত পাততে হয় না।’
অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫টি প্রকল্প-কর্মসূচির আওতায় নির্মিত ভবন ও জিইএমএস সফটওয়্যার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।