বিশ্বে মহামারি পরিস্থিতির বর্তমান যে অবস্থা, তাতে সব দেশ যদি মহামারির আগের দৈনন্দিন জীবনে ফিরে যায়, সেক্ষেত্রে প্রতি বছর করোনায় বিশ্বজুড়ে মৃত্যু ঘটবে অন্তত ২০ লাখ এবং শ্বাসতন্ত্রের এই প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হবেন অন্তত ২ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ।

চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা চায়না সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিসিডিসি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে এ তথ্য।

জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যে উদ্দীপ্ত বিভিন্ন ধনী দেশ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একের পর এক করোনা বিধিনিষেধ শিথিল করছে। মহামারি প্রতিরোধে গত ২ বছরের কঠোর বিধিনিষেধের ফলে বিপর্যস্ত অর্থনীতি ও জনজীবনকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেই মূলত এ পথে হাঁটছে ধনী দেশগুলো।

কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখনও ঢালাওভাবে যাবতীয় করোনা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার সময় আসেনি। সিসিডিসির সাম্প্রতিক এই গবেষনায় এক অর্থে ডব্লিউএইচওর এই অবস্থানকে সমর্থন করছে।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিসিডিসির শীর্ষ মহামারিবিদ উ জুনইউ বলেন, ‘আমরা আগে ভাবতাম মূলত টিকার মাধ্যমেই করোনা মহামারিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে- টিকা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ছাড়া মহামারিকে নির্মূল করার অন্যকোনো কার্যকর ও সহজ উপায় নেই।’

তবে টিকা যে মহামারি নির্মূলের প্রাথমিক হাতিয়ার—তা স্বীকার করেছেন চীনের গবেষকরা। সিসিডিসির গবেষণা প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটির অভিযোজনের ফলে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন ধরনের আগমন ঘটছে, তাই আমাদের উচিত হবে করোনা টিকার মান উন্নয়নে বৈশ্বিক পর্যায়ে গবেষণা অব্যাহত রাখা।’

‘কারণ মহামারি প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে এই টিকার মধ্যেই। বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষকে আরো অধিকতর কার্যকর টিকার আওতায় আনতে পারলে মহামারি নির্মূলের প্রথম ধাপে পা রাখা সম্ভব হবে।’

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।

তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।

এদিকে, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ‘জিরো কোভিড নীতি’ গ্রহণ করে চীন, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। মহামারি ছড়িয়ে পড়া রোধে দিনের পর দিন লকডাউনসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল এসব দেশে।

সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সম্প্রতি ‘জিরো কোভিড নীতি’ পরিহার করে ‘কোভিডের সঙ্গে বসবাস’ নীতি গ্রহণ করলেও চীন এখনও অটল আছে আগের নীতিতেই।

সূত্র: রয়টার্স