দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের হিজাব বিতর্ক ছড়িয়েছে গোটা দেশে। এমনকি হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভের পর আদালতে গড়ানো এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। আর এবার ভারতের এক কংগ্রেস নেতা বলেছেন, হিজাব না পরার কারণেই ভারতে ধর্ষণের হার সবচেয়ে বেশি।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই এবং সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। কর্ণাটকে চলমান হিজাব বিতর্কের মধ্যেই রাজ্যটির এক কংগ্রেস নেতার এই বক্তব্যকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতা এবং এমএলএ জমির আহমেদ বলছেন, ‘ইসলামে হিজাবের অর্থ হচ্ছে পর্দা। মেয়েরা বড় হলে অন্য মানুষের কাছ থেকে তাদের সৌন্দর্য লুকাতে পর্দা করতে হয়। আজ আপনারা দেখবেন যে, আমাদের দেশে (ভারতে) ধর্ষণের হার সবচেয়ে বেশি। এর পেছনে কারণ কী? এর কারণ হচ্ছে- কিছু নারী হিজাব পরেন না।’
বার্তাসংস্থা এএনআইয়ের কাছে তিনি আরও বলেন, ‘হিজাব পরা বাধ্যতামূলক না। যারা নিজেদের রক্ষা করতে চায় এবং যারা নিজেদের সৌন্দর্য সবার কাছে প্রকাশ করতে চান না তারাই কেবল হিজাব পরেন। হিজাব পরার রীতি ভারতে বহু বছর ধরে প্রচলিত রয়েছে।’
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে কর্ণাটকের বিভিন্ন স্কুল কলেজে একদিকে হিজাব পরে ক্লাস করার অনুমতির দাবিতে আন্দোলন করছে মুসলিম ছাত্রীরা। অন্যদিকে হিন্দু শিক্ষার্থীরা গেরুয়া ওড়না পরে হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে।
#WATCH | Hijab means 'Parda' in Islam…to hide the beauty of women…women get raped when they don't wear Hijab: Congress leader Zameer Ahmed on #HijabRow in Hubli, Karnataka pic.twitter.com/8Ole8wjLQF
— ANI (@ANI) February 13, 2022
কর্ণাটকের স্কুল-কলেজে হিজাব পরা মুসলিম মেয়েদের ঢুকতে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল, তা বর্তমানে দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যটির সীমানা ছাড়িয়ে দেশটির বাকি অংশেও ছড়িয়ে পড়েছে। হিজাবে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গে। মুখ খুলেছেন দেশটির বড় বড় রাজনীতিক ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বরাও।
কর্ণাটকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে গত মাসে উদুপি জেলার সরকারি বালিকা পিইউ কলেজে ছয়জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসতে বাধ্য করার পর। সেই সময় কলেজ প্রশাসন জানায়, ইউনিফর্মের অংশ নয় হিজাব এবং ওই ছাত্রীরা কলেজের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। ছাত্রীদের ক্লাসে হিজাব পরার বিষয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় ডানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী ও তাদের ছাত্র সংগঠন।
উদুপির এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের মান্দিয়া এবং শিভামোগগা এলাকায়। সেখানকার কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাব নিষিদ্ধ করে। যদিও আইনে হিজাব পরে মুসলিম ছাত্রীদের ক্লাসে আসতে কোনও বাধা নেই।
পরে উদুপির একটি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রী হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন। সেই বিষয়েই কর্ণাটকের হাইকোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু হিজাব সংক্রান্ত পিটিশনটি শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠিয়েছিল কর্ণাটক হাইকোর্ট। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টে এই শুনানি ফের শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।