আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনাদের সহায়তাকারী এবং মুক্তচিন্তার ৬৫ হাজার মানুষকে পুনর্বাসন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে আফগান নাগরিক যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে আফগান আমেরিকান নাগরিকও। এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত সপ্তাহে তালেবানের কাবুল দখলের পর উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার জনকে।
আমেরিকান নাগরিকরাও এসব আফগানকে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করছেন। শিশুদের খেলনা, বড়দের বইপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে তাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছেন। আর্থিকভাবে সহায়তাও করছেন অনেকে। এ খবর জানাচ্ছে ডেইলি মেইল ও সিবিএসসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
একে একে আফগানিস্তানের বেশিরভাগ এলাকা দখলের পর ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। মূলত এর আগে থেকেই নিজ দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে আমেরিকানদের সঙ্গে দেশ ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে আফগানরা, বিশেষ করে যারা পশ্চিমাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। এছাড়া জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী নন এমন মানুষ, শিল্পী,সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও মুক্তচিন্তার মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় করছে।
এমন পরিস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, আফগানিস্তানে বসবাসরত ১৫ হাজার আমেরিকান নাগরিকের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকে নানাভাবে সহযোগিতা করা ৬৫ হাজার আফগানকে পুনর্বাসন করতে চান তিনি। এর মধ্যে ইতোমধ্যে বিশেষ ভিসায় প্রায় দুই হাজার আফগান দোভাষীকে ভার্জিনিয়া স্টেটের ফোর্ট লিতে পুনর্বাসন করা হয়েছে। অবশিষ্টদের সরিয়ে আনতে কয়েকডজন বিমান পাঠানো হয়েছে।
সামরিক বিমানের পাশাপাশি কাজ করছে কমার্শিয়াল বিমানও। এসব বিমানে প্রতিদিনই প্রায় ১০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মার্কিন সামরিক কমকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার একদিনে ১৬ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কাবুল বিমানবন্দরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য দিতে গিয়ে উইলিয়াম হাঙ্ক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সামরিক এবং বাণিজ্যিক ফ্লাইটে করে আফগানিস্তান থেকে ১৬ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুধু মার্কিন সামরিক বাহিনী একাই প্রায় ১১ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে।
হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী গত ২৪ ঘণ্টায় কাবুল থেকে ১০ হাজার ৪০০ জনকে সরিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোটের ৫৯টি বিমানে করে আরও পাঁচ হাজার ৯০০ জনকে আফগানিস্তান থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিতে আফগান শরণার্থীদের যারা সহায়তা করেছেন, উদ্ধারকাজে সহায়তা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাইডেন। গত কয়েকদিনে এসব আফগান শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন। তাদের বিভিন্ন সাপোর্ট গ্রুপ এবং সাধারণ মানুষ সহায়তা করেছেন। বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যারাই আসবেন তাদেরই অতীত ইতিহাস বা ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করা হবে।
বাইডেন আরও বলেন, কাবুলে আমেরিকান সেনাদের অবস্থানের পরিধি এবং হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশের সুযোগ বাড়ানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ক্ষেত্র বাড়াতে তালেবান সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তালেবান যোদ্ধারা মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ও হামলা করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, আশ্রয় নেওয়া আফগান শরণার্থীদের মধ্যে দুই হাজার ব্যক্তিকে ভার্জিনিয়ার ফোর্ট লি’তে স্থানান্তর করা হয়েছে। শরণার্থীদের কাপড়চোপড়, শিশুখাদ্য, ডায়াপার, খেলনা ও বইসহ বিভিন্ন পণ্য দিয়ে স্থানীয় অধিবাসীরা সহায়তা করেন।
২০ হাজার আফগান শরণার্থী আশ্রয়ের ঘোষণা এয়ারবিএনবির : ২০ হাজার আফগান শরণার্থীকে বিনা মূল্যে থাকার ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছে অনলাইনভিত্তিক হোটেল-বাড়িভাড়াবিষয়ক আমেরিকান কোম্পানি এয়ারবিএনবি। কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বজুড়ে তাদের যত হোটেল আছে সব জায়গাতেই আফগানদের ফ্রি-তে থাকার বন্দোবস্ত করবে তারা। মঙ্গলবার কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান চেস্কি বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা কোনো পরিবারের তথ্য পেলেই সঙ্গে সঙ্গে তাদের থাকার ব্যবস্থা নেবে তারা। অন্য কোথাও আশ্রয় খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তাদের হোটেল বা ভাড়া বাড়িতেই থাকতে পারবে শরণার্থীরা। এ তথ্য জানাচ্ছে এবিসি।