আজ ১৭তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছে।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন  বলেছেন, অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসএ্যাবিলিটি (এনডিডি) বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের যথাযথ পুনর্বাসনে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, ‘সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর মানসিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ জীবন গঠনের পথ আরো প্রসারিত হবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।’

রাষ্ট্রপতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় এ বছরও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘১৭তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ উদ্যাপনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এ উপলক্ষে আমি দেশের সকল অটিজম ও এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তি, তাদের পরিবার এবং অটিজম নিয়ে কর্মরত ব্যক্তি ও সংগঠনসূহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সচেতনতা-স্বীকৃতি-মূল্যায়ন: শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা’ যথাযথ ও সময়োপযোগী হয়েছে।

মোঃ সাহাবুদ্দিন  বলেন, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আমাদের পরিবার ও সমাজেরই অংশ। সরকার প্রতিবন্ধী ও এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত আন্তরিক। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমন্বিত উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে সরকার ইতোমধ্যে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা আইন, ২০১৩’, ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩’, ‘বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন, ২০১৮’ এবং ‘প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা, ২০১৯’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছে। প্রতিবন্ধিতার ধরণ ও মাত্রা অনুযায়ী চিকিৎসা ও থেরাপি সেবা প্রদানের পাশাপাশি পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

অটিস্টিক ব্যক্তিদের কাউন্সেলিং ও থেরাপি সেবা প্রদানের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইতোমধ্যে অটিজম রিসোর্স সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এছাড়া অটিজম ও এনডিডি সেবা কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এবং অন্যান্য এনডিডি শিশু ও ব্যক্তিগণের জীবনমান উন্নত করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

রাষ্ট্রপতি  বলেন, অটিজম ও এনডিডি শিশু ও ব্যক্তিদের জীবনব্যাপী সেবা ও ভালোবাসার প্রয়োজন হয়। তাই অটিজমসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে কাউন্সেলিং ও রেফারেল সেবা এবং সহায়ক উপকরণ ও সহায়ক প্রযুক্তি প্রদান করে আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি ১৭তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সফলতা কামনা করেন।

অন্যদিকে, ১৭তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে সকলের সঙ্গে অটিজম ও প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিবর্গকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। এ লক্ষ্যে আরো বেশি প্রযুক্তিবান্ধব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে তিনি নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সুরক্ষা ট্রাস্টকে আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করে সঠিক পরিচর্যা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে মানবিক পরিবেশে গড়ে তোলা হলে তারাও পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার অটিজম ও প্রতিবন্ধীবান্ধব সরকার। বিগত ১৫ বছরে আমরা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গসহ সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কল্যাণে ব্যাপক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছি। এর মধ্যে রয়েছে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সুরক্ষা ট্রাস্ট বিধিমালা-২০১৫, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিধিমালা- ২০১৫, বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮ এবং প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০১৯। আমাদের সরকার এসকল আইনের সফল বাস্তবায়নে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ‘কাউকে পিছনে রেখে উন্নয়ন নয়’-এ নীতির আলোকে আমরা সমাজের সকলের জন্য উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের আওতায় চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) দেশের ১৪টি স্থানে প্রকল্প হিসেবে ১৪টি ‘অটিজম ও এনডিডি সেবা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের জন্য দেশের ৮টি বিভাগে ৮টি ‘চিকিৎসা, শিক্ষা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এনডিডি ব্যক্তির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সাধারণ বিমা কর্পোরেশনের সঙ্গে ট্রাস্ট যৌথভাবে ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা’ বাস্তবায়ন করছে।

তিনি বলেন, আমাদের সরকার এনডিডি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় ‘জাতীয় কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা ২০১৬-২০৩০’ প্রণয়ন করেছে। এই কর্মপরিকল্পনার আলোকে এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তির গৃহভিত্তিক পরিচর্যা ও মানসিক স্বাস্থ্যের যতœ নেয়ার জন্য মাতা-পিতা ও অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করেছে। একইসঙ্গে শিক্ষকদেরকেও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ‘১৭তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০২৪’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।