রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, শ্রমিকদের হাতিয়ার করে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের ষড়যন্ত্র করে একটি মহল। তাই শ্রমিকদের যেন ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আজ মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘আপনাদেরকে দুর্নীতি এবং অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে . . . যে কোনো পরিস্থিতিতে সরকার সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে – উৎসাহ যোগাবে।’
তিনি বলেন, দেশের শিল্পোন্নয়নে বিদ্যমান সকল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যেই ‘উন্নত বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে সক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে সনাতনী থেকে ডিজিটাল কর্মসূচিতে পদার্পণের ছোঁয়া পরিলক্ষিত হয়েছে এবং ডিজিটাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট কর্মসূচিতে পদার্পণে বেশি সময় লাগবে না।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের স্লোগান হবে টেকসই শিল্পায়ন স্মার্ট বাংলাদেশের দর্শন।’
রাষ্ট্রপতি দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে অবদান রাখারও তাগিদ দেন।
দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিদ্যমান- উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, শিল্প খাতের দেশি- দেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু- বসায়ীর অতি মুনাফালোভী মনোভাব ও রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং এতে জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে।’
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, অল্পকিছু লোকের অপকর্মের দায়ভার গোটা ব্যবসায়ী সমাজের হতে পারে না।
শ্রমিকদের কল্যাণের পাশাপাশি দুস্থ মানবতার সেবায় দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি।
শ্রমিকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি হচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, কিছু দুষ্টচক্র দু- কজনকে বেছে নেয় এবং এদেরকে মানবাধিকারের কথা বলে দেশ-বিরোধী চক্রান্ত করায়।
তিনি শিল্প- রখানায় শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা ও অধিকার প্রদানকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করারও অনুরোধ জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
অনুষ্ঠানে ৬টি ক্যাটাগরিতে ভারী, মাঝারি, ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও কুটির এবং উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প ইউনিটের মালিকসহ ১২ জন শিল্পোদ্যোক্তাকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের অসামান্য অবদানের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শিল্প পুরস্কার ২০২২’ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শিল্প উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য এই পুরস্কার একটি অনন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি যা তাদেরকে টেকসই শিল্পায়নে বিনিয়োগ ও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে উৎসাহ এবং প্রেরণা যোগাবে ।
তিনি আশা করেন, তাদের (পুরস্কার প্রাপ্তদের) অনুসরণ করে অন্যান্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও রপ্তানিকারকরা আগামী দিনে দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে উৎসাহিত ও উদ্যোগী হবেন।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। তাই বাংলাদেশ সরকার বৈশ্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছে এবং দেশের রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশের উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান অবস্থায় বাংলাদেশের রপ্তানি ও ব্যবসা- ণিজ্যে কী প্রভাব পড়তে পারে- তা চিহ্নিত করতে হবে এবং ঝুঁকি ও সম্ভাবনা বিবেচনা করে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, এমপির সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন—ষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়্যারম্যান এসএম নুরুল আলম রেজভী এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা।
আজকের অনুষ্ঠানে ৬টি ক্যাটাগরিতে- ভারী, মাঝারি, ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও কুটির এবং উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প ইউনিটের মালিকসহ ১২ জন শিল্পোদ্যোক্তাকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের অসামান্য অবদানের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শিল্প পুরস্কার ২০২২’ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে রানার অটোমোবাইলস লি., দ্বিতীয় হয়েছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লি. এবং তৃতীয় হয়েছে বিএসআরএম স্টিলস লি.। মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম নিতা কোম্পানি লি. এবং দ্বিতীয় নোমান টেরি টাওয়াল মিলস লি.। ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে হযরত আমানত শাহ স্পিনিং মিলস্ লি., দ্বিতীয় হয়েছে বসুমতি ডিস্ট্রিবিউশন লি. এবং তৃতীয় হয়েছে টেকনো মিডিয়া লি.। মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে, গ্রিন জেনেসিস ইঞ্জিনিয়ারিং লি.। কুটিরশিল্প ক্যাটাগরিতে একটি প্রতিষ্ঠান সামসুন্নাহার টেক্সটাইল মিলস্ এবং হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লি. এবং দ্বিতীয় হয়েছে সুপার স্টার ইলেকট্রিক্যাল এক্সেসরিজ লি.।