ব্যক্তিগত পর্যায়ে সঞ্চয় বাড়ানোর মাধ্যমে জাতীয় সঞ্চয় নীতিতেও অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় তথা অপচয় কমানো, আমদানিকৃত বিলাসদ্রব্য ক্রয় পরিহার করে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনায় মনোযোগ দিতে হবে।’
বুধবার (২৯শে জুন) জাতীয় সংসদে বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যয় কমানোর নানা পদক্ষেপ তুলে ধরার পাশাপাশি নাগরিকদের এ পরামর্শ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সঞ্চয় করতে হবে। প্রত্যেকের নিজস্ব সঞ্চয় বাড়ানো এবং প্রত্যেককে মিতব্যয়ী হতে হবে। আপনারা বিদ্যুৎ ঢালাওভাবে ব্যবহার করবেন না, পানি ঢালাওভাবে ব্যবহার করবেন না। অপচয় যেন না হয়। সকলেই কিছুটা কৃচ্ছতা সাধন করে, কিছুটা সঞ্চয় করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন।’
সবাইকে দেশীয় পণ্য ব্যবহারের দিকে নজর দেওয়া তাগিদ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘কথায় কথায় বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া যাবে না। কারণ দেশে ভালো চিকিৎসা হয়।’
করোনা অতিমারীর মধ্যে যুদ্ধ যে সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বিশ্বকে, সেই প্রেক্ষাপটে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে ‘হিসেবি গৃহস্থের’ পথ ধরতে দেশবাসীকে পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী।
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধকে বাংলাদেশের জন্য ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে সমস্ত জিনিস বিশেষ করে আমাদের আমদানি করতে হয়, যেমন জ্বালানি তেল, গম, ভোজ্য তেল, এলএনজি, প্রত্যেকটার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জাহাজের ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে।’
নয়টি পণ্য একই পরিমাণ আমদানিতে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে এই প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে, আমরা আমাদের উন্নয়নের গতিশীলতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করি।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দেন তিনি, মূল্যবৃদ্ধি জনগণের উপর যে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে, সে কারণে সরকারের ভর্তুকি বাড়ানোর ইঙ্গিতও তিনি দেন।
‘সার, বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাসে আমাদের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কেবল আন্তর্জাতিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে আগামী অর্থবছরে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার, বিদ্যুৎ খাতে যে ঘাটতি হবে, তার মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে শতভাগ চাপিয়ে দেব না। যার ফলে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় বাড়বে।’
এই সময়ে আমদানি ব্যয় বাড়লেও তাতে সঙ্কটের চেয়ে সম্ভাবনাই বেশি দেখতে পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা যেহেতু বেশিরভাগই ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি করেছি, সেগুলো যখনই স্থাপন হবে, শিল্প চালু হবে, তার থেকে আমাদের দেশ লাভবান হবে। এটা করতে গিয়ে আমাদের হয়ত ডলারে কিছুটা টান পড়েছে। কিন্তু সেটা এখনও আমি মনে করি আশঙ্কাজনক কোনো বিষয় নয়। কাজেই এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’
কোভিড মহামারী মোকাবেলায় সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জনগণ স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনেছে বলেই মৃত্যুর হার আমরা অনেক কম রাখতে পেরেছি।’
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য যে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট সরকার প্রস্তাব করেছে, জনগণের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়নের আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।