দেশের বিভিন্ন জেলায় অষ্টমী স্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাপ মোচনের আশায় চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে স্নান করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের পুণ্যার্থীরা অংশ নেন এই স্নানে।

পাপ মোচনের আশায় চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে অষ্টমী স্নান করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। স্নান উপলক্ষে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের দুই তীরে ঢল নামে হাজারো পুণ্যার্থীর। ভোর ৫টা থেকে নগরীর থানা ঘাট, কাচারি ঘাট, গুদারা ঘাট ও শম্ভুগঞ্জ ঘাটে এই পুণ্য¯স্নান অনুষ্ঠিত হয়।

স্নান উপলক্ষে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে থানাঘাটে পুণ্যার্থীদের জন্য বিশেষ সেবা চালু করেছে।

স্নান শেষে পোশাক পরিবর্তনের জন্য ছাউনি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নদ খননের কারণে বিভিন্ন স্থানে চোরাবালি বা নদীর গভীরতা বেশি থাকতে পারে এমন শঙ্কায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সচেতন করা হয়। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় নিশ্চিত করতে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি ডিবি পুলিশ নৌকায় টহল দিয়েছে নদে।

এ ছাড়া স্নান উপলক্ষে থানাঘাটে ঐতিহ্যবাহী খেলনার মেলা বসেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে শিশুদের জন্য মাটি দিয়ে তৈরি নানা ধরনের খেলনার পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। মাটির ব্যাংক, হাঁড়ি-পাতিল, পুতুল, পালকিসহ গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলনাসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে মেলায়। স্নানে আসা নারী ও শিশুরা এসব খেলনার দোকান ঘিরে ভিড় করছেন।

ত্রিশাল উপজেলার কোনাবাড়ী থেকে অষ্টমী স্নানে এসেছেন রঞ্জিদ পাল। তিনি বলেন, করোনার কারণে আগে অষ্টমী স্নান সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ত্রিশাল থেকে এসেছি। এখানে আসার পর অনেক স্বজনদের সঙ্গেও দেখা হচ্ছে।

ময়মনসিংহ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শংকর সাহা কালবেলাকে বলেন, ভোর ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ ও গফুরগাঁওয়ে শান্তিপূর্ণভাবে অষ্টমী স্নান সম্পন্ন হয়েছে। নগরীর ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে দেড় লাখ পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটেছে। সিটি করপোরেশন, জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের সকল সংস্থা সার্বিক সহযোগিতায় অষ্টমী স্নান সম্পন্ন হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জে চার নদীর মোহনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমীর স্নানে পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে। ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্নানের উত্তম লগ্ন ঠিক করা হয়েছে। খালি পায়ে ফুল-ফল নিয়ে নদী তীরে উপস্থিত হয়ে স্নান করছে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। উলুধ্বনি ও নানা বাসনায় করা হচ্ছে প্রার্থনা। নদীতে ভাসানো হচ্ছে কলা-চিনি। পরে মন্ত্রপাঠ ও কালীমন্দিরের পূজায় অংশ নেন ভক্তরা। এ উপলক্ষে এলাকা জুড়ে বসেছে মেলা।

এদিকে স্নান উপলক্ষে তীরে বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছে স্নান উৎসব কমিটি। নিরাপত্তায় রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট। দিনব্যাপী স্নানোৎসব চলবে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমী স্নানে হাজারো পূণ্যার্থী অংশ নেয়। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী গীতাপাঠ, ধ্যান, প্রসাদ বিতরণ, হরিনাম সংকীর্তনে অংশ নেন পূণ্যার্থীরা, স্নান করে পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে ফুল-ফল তর্পণ করেন তারা। নদের তীরে কুলেশ্বরী বাড়ী, কাচারী মাঠ ও রামপুর বাজারে বসে অষ্টমীর মেলা।

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে মহাঅষ্টমী স্নানে অংশ নেয় দশ লক্ষাধিক পূন্যার্থী। সোমবার বিকেল থেকে শুরু হয় এই উৎসব। মহাতীর্থ অষ্টমী স্নান চলবে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত। ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পুণ্যার্থীরা স্নানে অংশ নেয়।

স্নান উপলক্ষে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানীরা।