নির্বাহী আদেশে আগামীকালের মধ্যেই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ ব্যাপারে আইনগত দিক খতিয়ে দেখতে বিকালে বৈঠক হবে বলে জানান তিনি। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বুধবারের মধ্যেই জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হচ্ছে। কোন আইনি প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ হবে তা নিয়ে বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসব।

আনিসুল হক বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকারের বক্তব্য শুনেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন আগামীকালের মধ্যে একটা ব্যবস্থা নেওয়ার। আমি কিছুক্ষণ পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে বসব এবং সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। কোন আইনি প্রক্রিয়ায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে সেটা যখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব তখন হবে।

এই মুহূর্তে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হলে সরকার পরবর্তীতে কোনো ঝামেলায় পড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, গত ১৬ জুলাই থেকে দেশে যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা চালানো হয়েছে; যারা কোটা আন্দোলন করেছে, তারা কিন্তু বলেছে এই সহিংসতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেই ক্ষেত্রে আমাদের কাছে তথ্য উপাত্ত আছে। জামায়াত-শিবির-বিএনপি-ছাত্রদল যারা জঙ্গি তারাই এটা করেছে। এই দলটাকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং রাজনীতিরও অনেক উন্নতি হবে।

আনিসুল হক আরও বলেন, কোনো দলকে যখন নিষিদ্ধ করা হয় তখন সেটা নির্বাহী আদেশেই হয়। সেটা কোনো বিচার বিভাগীয় আদেশে হয় না। যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা এক কথা এবং জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা আরেক কথা।

আদালতের রায়ে ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা এড়াতে দেশে কারফিউ জারি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ১৯ জুলাই রাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ১০ দিনের মাথায় গতকাল আবারও জোটের জরুরি বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেই জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন জোটের নেতারা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বলেন, সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ১৪ দলীয় জোটের চেয়ারপারসন, সেখানে শরিক দলগুলোর বক্তব্য, তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ, দলটির অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন সময় দেওয়া আদালতের রায় ইত্যাদি বিবেচনায় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধে ১৪ দল সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সরকার। আর বাস্তবায়নের পদ্ধতি কি হবে তার আইনগত দিক দেখে শুনে  শিগগিরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে সরকার। কারণ আমরা আইনগত দিকগুলো ভালোভাবে দেখে নিতে চাই। যাতে কোনো ফাঁক-ফোকর দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে এ অপশক্তি আর কোনো সুযোগ না পায়।

তিনি আরও বলেন, দলীয়ভাবে ঢাকা মহানগরসহ সব মহানগর, সব জেলা, সদর, সব উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীদের বিরাজমান পরিস্থিতিতে কারফিউ মেনে চলার কথা জানানো হচ্ছে। দলীয়ভাবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এটা আমাদের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশ। গুজব ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। গুজব সৃষ্টিকারীদের তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানাতে হবে।