গত পাঁচ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে কোথায় রয়েছেন, সেই বিষয়ে কথা বলেছে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর। বৃহস্পতিবার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ভারতের দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও ভারতেই রয়েছেন।’’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের বিষয়ে আমি আগেই বলেছিলাম যে, তিনি স্বল্প সময়ের নোটিশে এখানে এসেছিলেন এবং তিনি এখানেই রয়েছেন।’’

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চরম আকার ধারণ করায় গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে সামরিক বাহিনীর বিমানে করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত গন্তব্য নিয়ে বিভিন্ন ধরনের জল্পনা থাকলেও তিনি কতদিন ভারতে অবস্থান করবেন, সেই বিষয়ে দেশটির সরকার কোনও তথ্য জানায়নি।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও আসেনি। তবে আনঅফিসিয়ালি জানা গেছে তিনি ভারতে রয়েছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে শেখ হাসিনা দিল্লিতেই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালানোর নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় বিচারের জন্য তাকে দেশে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল থেকে যে ৪০-৪৫ জনের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তারা কোথায় আছে জানার চেষ্টা করছে মন্ত্রণালয়।’

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এর অংশ হিসেবে প্রসিকিউটরদের বদলে ফেলার পর গত সোমবার নতুন তিন বিচারককে দায়িত্ব দিয়ে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও দুই সদস্য মঙ্গলবার প্রথম কর্মদিবসে ট্রাইব্যুনালে যান। বৃহস্পতিবার তারা মামলার কার্যক্রম শুরু করলেন।

গত ৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ ৫৬টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।