বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় আন্দোলনের জের ধরে অনির্দিষ্টকালের জন্য চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভা শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতেও এ তথ্য জানানো হয়।
ছাত্রদের আজ বিকাল ৫টার মধ্যে ও ছাত্রীদের আগামীকাল সকাল নয়টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা শাহ আমানত পরিবহনের আটকে রাখা দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে।
চুয়েটের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, আন্দোলনকারীরা বৃহস্পতিবারও অবরোধের মধ্যে গাড়ি ভাংচুর ও গাড়িতে আগুন দেওয়ায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়।
চুয়েটের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চুয়েটের পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার মধ্যে ছাত্রদের এবং শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগ করতে হবে।
সোমবার বিকালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জিয়া নগর সেলিনা কাদের চৌধুরী কলেজ সংলগ্ন চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাস ও মোটর সাইকেলের সংঘর্ষে চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন, চুয়েট পুরকৌশল বিভাগের ২০তম ব্যাচের শান্ত সাহা ও ২১তম ব্যাচের তৌফিক হোসেন। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত আরেক শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সহপাঠীর মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা সোমবার বিকাল থেকে চুয়েট গেইটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিল। সেদিন রাতে শাহ আমানত পরিবহন গ্রুপের একটি বাসে আগুন দেয় তারা। এছাড়া একই সার্ভিসের বাস ভাংচুর করা হয়।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সাথে চুয়েট কর্তৃপক্ষ, পরিবহন মালিক শ্রমিক প্রতিনিধি ও ছাত্র প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে নিহতদের পাঁচ লাখ করে ও আহত শিক্ষার্থীকে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম গোলাম মোর্শেদ খানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা ১০ দফা ঘোষণা করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। তারা নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ২ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানায়।
বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় গেইটে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ফের বিক্ষোভ শুরু করলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারো চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বেশিরভাগ গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে হেঁটে যেতে বাধ্য করা হয়। শিশু ও বৃদ্ধদেরও তারা গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়।
বিক্ষোভের মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। তারপর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত আসে।