আন্দোলনের নামে দুর্বৃত্তপনা করলে কিন্তু ছেড়ে দেবো না, বলে বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২১ অক্টোবর) বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন ও আইনজীবী মহাসমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আন্দোলন করছে, করুক। আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আন্দোলনের নামে দুর্বৃত্তপনা করলে কিন্তু ছেড়ে দেবো না।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচার চাওয়ার পথ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে জিয়াউর রহমানের সহায়তায় বেঈমান মোস্তাক ক্ষমতা দখল করে। টিকতে পারেনি। যারা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ায়, তারা বেইমানদের ব্যবহার করে, কিন্তু রাখে না। এটাই হলো বাস্তবতা। মোশতাককে বিদায় নিতে হয়। আসল চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসে জিয়া। ক্ষমতা দখল করে। ইনডেমনিটি জারি করে আমাদের বিচার থেকে বঞ্চিত করে। নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস করে। নিজেই দল গঠন করে কারচুপি করে ২/৩ শতাংশ মেজোরিটি দিয়ে সংবিধান ক্ষত-বিক্ষত করে।

তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজও বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। তার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে দিয়ে যান। বিচার কাজে নারীদের যাওয়ার পথ সুগম করেন জাতির পিতা। তার হাত ধরে আমরা সেটা আরও সহজ করে দিয়েছি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হওয়ার পর আইনজীবীদের পাশে দাঁড়ানোর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে আমাকে আগেই গ্রেফতার করেছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, যখন গ্রেফতার করেছে, আপনারা আইনজীবীরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিনিয়ত একটার পর একটা মামলা দিয়েছে। আমাকে হয়রানি করেছে। আমি কিন্তু টলিনি। নিম্ন আদালতের পাশাপাশি উচ্চ আদালতের আইনজীবীরাও পাশে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যত বেশি স্বাবলম্বী হব, তত বেশি আইনজীবী থেকে শুরু করে সবার জন্য সুযোগ অবারিত করে দিতে পারব। আসুন সবাই মিলে সেই বাংলাদেশ গঠনে কাজ করি। আপনারা মানুষের পাশে থাকবেন। যেখানেই অন্যায় দেখবেন, অন্যায়কারী যেন সাজা পায় সে জন্য কাজ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল, আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, দুর্নীতি করতে তো আসিনি। পরে এটা আদালতে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ২০০১ এ বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি-জামায়াত এসেছে ক্ষমতায়। তারা দেশের অর্থপাচার করেছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দেশ বানিয়েছে। সারাদেশে বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছে। বেঁচে গেছি, এটা ঠিক। কিন্তু তারা দেশে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য করেছে।

Hasina2

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ এম আমিন উদ্দিন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু ও আইন সচিব গোলাম সরওয়ার।

অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বহুতল নবনির্মিত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবনটি তৈরিতে ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আইন ও বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে, গণপূর্ত অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় ও স্থাপত্য অধিদফতরের নকশায় ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত অফিস স্পেস, মিটিং রুম, দুটি কনফারেন্স রুম, রেকর্ড রুম, স্টোর রুম, ওয়েটিং এরিয়া, ক্যাফেটেরিয়া, ডে-কেয়ার সেন্টার, এক্সিবিশন স্পেস, রিসিপশন, রেজিস্ট্রেশন রুম, ব্যাংক, অ্যাকাউন্টস সেকশন, আইটি সেকশন ইত্যাদি।

আইনজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ কক্ষ, পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল কক্ষ, সুপরিসর মাল্টিপারপাস হল, নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক নামাজ কক্ষ রয়েছে। এছাড়া টিভি লাউঞ্জ, কিচেন ও ডাইনিং হলসহ শতাধিক আইনজীবীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভবনটিতে চারটি লিফট, ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং পুরুষ-নারী-প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক শৌচাগার রয়েছে। প্রকল্পে আরবরিকালচারের মাধ্যমে ল্যান্ডস্কেপিং করা হয়েছে। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সাবস্টেশন ও জেনারেটরের মাধ্যমে পৃথক বৈদ্যুতিক লাইন সংযুক্ত করা হয়েছে।