মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা গেছেন। সোমবার রাত পৌনে নয়টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। দেলাওয়ার হোসেনের ছেলে মাসুদ সাঈদী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
বিএসএমএমইউ এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সাঈদীর ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়েছিলো।
দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। শনিবার দুপুরে বুকে ব্যথা অনুভব করলে দণ্ডপ্রাপ্ত এই আসামিকে প্রথমে কারা হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন সাঈদী।
১৩ বছর আগে রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই কারাগারে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর এই সাবেক নায়েবে আমির।
২০১০ সালের ২৪ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আইয়ুব আলী চৌধুরী। তদন্ত শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
২ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকা আয় গোপন করে তার উপর প্রযোজ্য ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার ৮১২ টাকা কর ফাঁকির অভিযোগে ২০১১ সালের ১৯ আগস্ট মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। ৮০ বছর বয়সী সাঈদী তার আগে থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন।
ওই রায়ের পর দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। ওই তাণ্ডবে প্রথম তিন দিনেই নিহত হন অন্তত ৭০ জন। এছাড়া বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।
সাঈদী আপিল করলে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেয়। তাতে সাজা কমে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ আসে। ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন হলেও তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।