সিরিজ নিশ্চিত হয়েছিল আগের ম্যাচেই। তবে আরেকটা উপলক্ষ ছিল শেষ ওয়ানডেতে। সেই উপলক্ষও উৎসবে রঙিন হলো। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে তাদেরই মাঠে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। হারারে স্পোর্টস ক্লাবের শেষ ম্যাচ লাল-সবুজ জার্সিধারীরা জিতেছে ৫ উইকেটে।
তাতে আরেকটি হোয়াইটওয়াশ আনন্দে মাতলো বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে তামিম ইকবালরা কতটা শক্তিশালী, তার প্রমাণ আরেকবার দিলো এবারের সিরিজে। আর এই উপলক্ষের কারিগর অধিনায়ক তামিম নিজেই। শেষ ওয়ানডেতে তার সেঞ্চুরিতেই তৈরি হয় জয়ের পথ। শেষ দিকে নুরুল হাসান সোহান ও আফিফ হোসেনের ব্যাটে ভর করে আফ্রিকার দলটিকে ওয়ানডেতে ষষ্ঠবারের মতো হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবালো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের লক্ষ্য মোটেও সহজ ছিল না। আগে ব্যাট করে ৪৯.৩ ওভারে স্বাগতিকরা স্কোরে জমা করেছিল ২৯৮ রান। সেই লক্ষ্যে তামিমের ১১২ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের পর ১২ বল আগে ৫ উইকেট হাতে রেখে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন ৪৫ রানে অপরাজিত থাকা নুরুল ও ২৬ রানে অপরাজিত থাকা আফিফ হোসেন।
জিম্বাবুয়েকে ষষ্ঠবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করে সব মিলিয়ে ১৫বার এই আনন্দ উপভোগ করলো বাংলাদেশ। আফ্রিকার দলটি ছাড়াও নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও কেনিয়াকে দুইবার করে এবং পাকিস্তান, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডকে একবার করে হোয়াইটওয়াশ করেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা তামিম নিঃসন্দেহে এই জয়ের নায়ক। তবে অপেক্ষায় থাকা নুরুল সুযোগ পেয়ে নিজেকে চিনিয়েছেন। প্রয়োজনের সময় ক্রিজে যেমন নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন, তেমনি খেলেছেন হাত খুলে। ৩৯ বলে খেলা ইনিংসটিতে মেরেছেন ৬ বাউন্ডারি। আফিফ ১৭ বলে হার না মানা ২৬ রান করতে মেরেছেন ৩ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কা।
লিটনের বিদায়ে ভাঙে জুটি
২৯৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা মন্দ ছিল না। তামিম ও লিটন দাস মিলে যোগ করেন ৮৮ রান। দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছিলেন আগের ম্যাচে। প্রয়োজনের সময় ধরেছিলেন দলের হাল। আজ (মঙ্গলবার) তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতেও তার ব্যাটে ছিল ভালো ইনিংসের ইঙ্গিত। তবে ছন্দ ধরে রাখতে পারলেন না লিটন দাস। সুইপ শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেছেন তিনি।
এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বাংলাদেশ হারায় প্রথম উইকেট। তার আগে ওপেনিং জুটিতে যোগ হয় ৮৮ রান। ওয়েসলি মাধেভেরের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে মারুমানির হাতে ধরা পড়েন লিটন। ফেরার আগে ৩৭ বলে ৩ বাউন্ডারিতে খেলে যান ৩২ রানের ইনিংস।
পারেননি সাকিব
বীরোচিত এক ইনিংস খেলে দ্বিতীয় ওয়ানডে জয়ের নায়ক ছিলেন সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে চেনারূপে ফেরায় নিজে যেমন তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছিলেন, তেমনি বাংলাদেশ দলে ফিরেছিল স্বস্তি। যদিও শেষ ওয়ানডেতে ছন্দ ধরে রাখতে পারলেন না সাকিব আল হাসান।
ভালো শুরু পেলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। ৪২ বলে ৩০ রান করে আউট হয়ে গেছেন সাকিব। আগের ম্যাচে হার না মানা ৯৬ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছিলেন, তবে আজ (মঙ্গলবার) আর পারলেন না তিনি। ১ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি শেষ হয়েছে লুক জংউইয়ের বলে।
এই পেসারের বল এতটা নিচু হয়ে যাবে, বুঝতে পারেননি সাকিব। বল তার ব্যাটের নিচের দিকে লেগে জমা পড়ে উইকেটকিপার রেগিস চাকাভার গ্লাভসে।
সেঞ্চুরি দিয়েই তামিমের রানে ফেরা
জিম্বাবুয়ে সফরে একেবারেই হাসছিল না তামিম ইকবালের ব্যাট। প্রথম ম্যাচে ‘ডাক’ মারার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আউট ২০ রানে। সমালোচনা শুরু হতে কী আর দেরি হয়! বাংলাদেশের ওয়ানডেতে অধিনায়ক সব সমালোচনার জবাব দিলেন সেঞ্চুরি দিয়ে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে শতক পূরণ করেছেন তামিম। দারুণ ব্যাটিংয়ে, বিশেষ করে শুরু থেকে আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট করে তিন অঙ্কের ঘর ছুঁয়েছেন বাঁহাতি ওপেনার। ৮৭ বলে পেয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪তম সেঞ্চুরি।
তামিমের বিদায় ও মাহমুদউল্লাহর আসা-যাওয়া
২ বলে ম্যাচের দৃশ্যপট কতটা পাল্টে গেলো! যে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ছিল বাংলাদেশের হাতে, সেটিতে সমান প্রভাব এখন জিম্বাবুয়ের। তামিম ইকবালের পরপরই মাহমুদউল্লাহকে হারানোয় চাপে পড়ে গেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর আউট হয়ে গেছেন তামিম। তার বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহ ক্রিজে এলেন আর গেলেন! মুখোমুখি প্রথম বলেই বিদায় নিয়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। অর্থাৎ, টানা ২ বলে ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের ফিরিয়ে ডোনাল্ড তিরিপানো হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন।
রানখরায় ভুগতে থাকা তামিম অবশেষে ছন্দে ফিরেছেন। হারারের তৃতীয় ওয়ানডেতে পেয়েছেন ৫০ ওভারের ক্রিকেটের ১৪তম সেঞ্চুরি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি পাওয়ার পর তিরিপানোর বলে উইকেটকিপার রেগিস চাকাভার গ্লাভসে ধরা পড়েন। ফেরার আগে ৯৭ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় বাংলাদেশ অধিনায়ক খেলে যান ১১২ রানের ঝলমলে ইনিংস।
কিন্তু তার আউট যে এভাবে প্রভাব ফেলবে, কে জানতো! পরের বলেই আউট হয়ে গেলেন নতুন ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ। বোলার সেই তিরিপানো ও গ্লাভস চাকাভার। প্রথম বলে ফিরে যাওয়া মাহমুদউল্লাহর নামে পাশে ছিল শূন্য।
প্রমাণ করলেন নুরুল
ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা তামিম নিঃসন্দেহে এই জয়ের নায়ক। তবে অপেক্ষায় থাকা নুরুল সুযোগ পেয়ে নিজেকে চিনিয়েছেন। প্রয়োজনের সময় ক্রিজে যেমন নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন, তেমনি খেলেছেন হাত খুলে। ৩৯ বলে খেলা ইনিংসটিতে মেরেছেন ৬ বাউন্ডারি। আফিফ ১৭ বলে হার না মানা ২৬ রান করতে মেরেছেন ৩ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কা।
ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরা
শেষ ওয়ানডেতে দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ম্যাচসেরা হয়েছেন তামিম। আর ব্যাট-বলে হাতে আলো ছড়িয়ে সিরিজসেরা পুরস্কার জিতেছেন সাকিব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৮ ওভারে ৩০২/৫ (তামিম ১১২, নুরুল ৪৫*, লিটন ৩২* সাকিব ৩০, মিঠুন ৩০, আফিফ ২৬*; মাধেভেরে ২/৪৫, তিরিপানো ২/৬১)।
জিম্বাবুয়ে: ৪৯.৩ ওভারে ২৯৮ (চাকাভা ৮৪, বার্ল ৫৯, সিকান্দার ৫৭; মোস্তাফিজ ৩/৫৭, সাইফউদ্দিন ৩/৮৭, মাহমুদউল্লাহ ২/৪৫)।
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: তামিম ইকবাল।
সিরিজসেরা: সাকিব আল হাসান।