মধ্যপ্রাচের দেশ ইয়েমেনের উপকূলে একটি নৌকাডুবির ঘটনায় কমপক্ষে ৬৮ আফ্রিকান শরণার্থী ও অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৭৪ জন। ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে দেড় শতাধিক অভিবাসী ছিলেন এবং নিহতরা সবাই আফ্রিকান।
রোববার (৩ আগস্ট) জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ইয়েমেন উপকূলে নৌকাডুবির ধারাবাহিকতার মধ্যে এটি সর্বশেষ ঘটনা, যেখানে সংঘাত ও দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে ধনী উপসাগরীয় আরব দেশগুলোতে পৌঁছানোর আশায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ইয়েমেন শাখার প্রধান আবদুসাত্তার এসোয়েভ জানিয়েছেন, রবিবার (৩ আগস্ট) ভোরে দক্ষিণ ইয়েমেনের আবিয়ান প্রদেশের কাছে এডেন উপসাগরে ১৫৪ জন ইথিওপীয় অভিবাসী নিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়।
আবদুসাত্তার এসোয়েভ বলেন, খানফার জেলায় ৫৪ জনের মরদেহ ভেসে এসেছে এবং আরো ১৪ জনের মরদেহ অন্য একটি এলাকায় পাওয়া গেছে। মরদেহগুলো উদ্ধার করে আবিয়ান প্রদেশের রাজধানী জিঞ্জিবারের একটি হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নৌকাডুবিতে মাত্র ১২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, বাকিরা নিখোঁজ এবং মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।
বিপুল সংখ্যক মৃত ও নিখোঁজ অভিবাসীর কারণে আবিয়ান নিরাপত্তা অধিদপ্তর বড় ধরনের অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উপকূলের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে অনেক মরদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাওয়া গেছে।
আফ্রিকার হর্ন অঞ্চল ও ইয়েমেনের মধ্যে সমুদ্রপথ শরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্য বেশ সাধারণ হলেও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ রুট। ২০১৪ সালে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর দেশটি থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও বেড়েছে।
অবশ্য ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে হুথি বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হওয়ার পর সহিংসতা কিছুটা কমেছে এবং মানবিক সংকট আংশিক হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে, সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ার মতো দেশের সংঘাতপীড়িত মানুষজন ইয়েমেনে আশ্রয় নিতে বা সেখান দিয়ে উপসাগরীয় ধনী দেশগুলোর উদ্দেশে যাত্রা করতে গিয়ে এই বিপজ্জনক পথে পাড়ি দিচ্ছে। আইওএম-এর মতে, এটি বিশ্বে অন্যতম ব্যস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসন রুট। মূলত এই পথ ধরে ইয়েমেনে পৌঁছাতে অভিবাসীরা প্রায়ই অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নৌকায় লোহিত সাগর পাড়ি দেন।
আইওএম-এর তথ্যমতে, ২০২৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি শরণার্থী ও অভিবাসী ইয়েমেনে পৌঁছেছেন, যা আগের বছরের ৯৭ হাজার ২০০ জনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। আইওএম-এর মে মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সমুদ্রপথে নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় এই সংখ্যা কমেছে।
এই পথে গত দুই বছরে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আইওএম জানায়, গত বছর এই রুটে ৫৫৮ জন মারা গেছেন। এছাড়া গত এক দশকে এই পথে কমপক্ষে ২ হাজার ৮২ জন নিখোঁজ হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬৯৩ জনের ডুবে মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে ইয়েমেনে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসী অবস্থান করছেন।