রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩ জন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে আটজন ছাড়া পেয়েছেন। বাকি ৩৫ জনের মধ্যে ১৫ জন নারী। এর মধ্যে দুজন হলেন নিলুফার হামেদি ও এলাহে মোহাম্মদি। ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ বছর বয়সি হামেদি ইরানের সবচেয়ে বেশি প্রচারিত সংবাদপত্র ‘শার্ঘ’-এ কাজ করেন। মাহসা আমিনির মৃত্যুর খবর তিনি প্রথম প্রকাশ করেছিলেন। চুল হিজাবে ঠিকভাবে ঢাকা না হওয়ার অভিযোগে আমিনিকে আটক করেছিল ইরানের নীতি পুলিশ। এর কদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর ঘোষণা দেয়া হয়। এর আগে আমিনি হাসপাতালে কোমায় ছিলেন। আমিনির মৃত্যুর চারদিন পর হামেদিকে আটক করা হয় তখন থেকে তিনি বন্দি আছেন। যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

এদিকে ইরানের কুর্দি অঞ্চল সাকেজে অবস্থিত আমিনির বাড়িতে তাকে কবর দেয়ার খবর প্রকাশ করেছিলেন মোহাম্মদি। এই খবর প্রকাশের পর বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, যেটা পরবর্তীতে বেড়ে বড় আকার ধারণ করেছিল। এই খবর প্রকাশের দুই সপ্তাহ পর মোহাম্মদিকেও আটক করা হয়। অক্টোবরের শেষদিকে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ও রেভুলেশনারি গার্ডের গোয়েন্দা বিভাগ যৌথ এক বিবৃতিতে হামেদি ও মোহাম্মদির সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ আনে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে কাজ করা আমেনেহ সাদাত জাবিহপুর জানান, হামেদি সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিনল্যান্ড, তুরস্ক, সাউথ আফ্রিকায় ‘হাইব্রিড ওয়ারফেয়ারের’ উপর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার হচ্ছে এক ধরনের যুদ্ধকৌশল, যা সাধারণ সামরিক যুদ্ধ, অর্থনৈতিক চাপ, ভুয়া তথ্য ও প্রতারণার একটি সংমিশ্রণ।

জাবিহপুর সাধারণত রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে ‘স্বীকারোক্তিমূলক সাক্ষাৎকার’ নিয়ে থাকেন। ১৬ নভেম্বর তাকেসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়ন ও সেন্সরশিপ বাস্তবায়নে ইরান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে কাজ করেন। ইরান সরকারের সমর্থকরা জাবিহপুরের মতো ব্যক্তির পরিবেশন করা ভুল তথ্য সহজে গ্রহণ ও প্রচার করেন।

ইরানের ‘কমিটি অফ হিউম্যান রাইটস রিপোর্টার্সের’ সদস্য শিভা নজর আহারি জানান, অনলাইনে যে ভুল অভিযোগ প্রচারিত হয় তা পরবর্তীতে আদালতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আহারিকে বেশ কয়েকবার আটক করা হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে স্লোভেনিয়ায় বাস করছেন তিনি।

তবে সরকারের এসব কর্মকাণ্ড অনেক নারীকে ভয় দেখাতে পারছে না। যেমন সাংবাদিকতার ছাত্রী নাজিলা মারুফিয়ান। তিনি একজন কুর্দি। আমিনি মারা যাওয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পর ১৯ অক্টোবর তার নেয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি আমিনির বাবার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছিলেন।

আমিনির বাবা জানান, তার মেয়ের এমন কোনো শারীরিক অসুস্থতা ছিল না যা থেকে মৃত্যু হতে পারে। মারুফিয়ান তার রিপোর্টের শিরোনাম দিয়েছিলেন, ‘তারা মিথ্যা বলছেন’

খবর প্রকাশ হওয়ার কিছুক্ষণ পর টুইটারে ২৩ বছর বয়সি মারুফিয়ান লেখেন, ‘আমার নিজেকে মেরে ফেলার কোনো ইচ্ছা নেই। আমার কোনো অসুস্থতা নেই। আমি এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করতে পেরে খুশি।’ ৩০ অক্টোবর মারুফিয়ানকে আটক করা হয়।