ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি হামলায় একদিনে আরও ৮৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও সাড়ে চার শতাধিক মানুষ। এর ফলে ভূখণ্ডটিতে ইসরাইলের গণহত্যামূলক অভিযানে নিহতের সংখ্যা ৫৯ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে ২৪ জুলাই বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় গাজা উপত্যকায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ৫৯ হাজার ৫৮৬ জনে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৯টি মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং ৪৫৩ জন আহত হয়েছেন। তবে এখনও অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বা রাস্তায় পড়ে আছেন, যাদের কাছে উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতেই পারছেন না।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৭৯ জনের পরিচয় শনাক্ত করে তাদের নাম সরকারি তালিকায় যুক্ত করায় মৃত্যুর সংখ্যা হঠাৎ করে অনেক বেড়েছে। একই সময়ে মানবিক সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টা করতে গিয়ে ইসরাইলি হামলায় আরও ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬৮ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
গত ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়েই ১ হাজার ৮৩ জন নিহত এবং ৭ হাজার ২৭৫ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গত ১৮ মার্চ থেকে আবারও পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এতে করে জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি ভেঙে যায়। এরপর থেকে আরও ৮ হাজার ৪৪৭ জন নিহত এবং ৩১ হাজার ৪৫৭ জন আহত হয়েছেন।
গাজায় মানবিক বিপর্যয় অবর্ণনীয় ও অযৌক্ত্যিক : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক সংকটের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেছেন, সেখানে মানুষের যে দুর্ভোগ চলছে তা অবর্ণনীয় এবং কোনোভাবেই যৌক্তিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।শুক্রবার (২৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বৃহস্পতিবার দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গাজার পরিস্থিতি অনেক দিন ধরেই গুরুতর” থাকলেও এখন তা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সাক্ষী হচ্ছি।” এই সংকট মোকাবিলায় জার্মানি ও ফ্রান্সের নেতাদের সঙ্গে জরুরি আলোচনা করবেন জানিয়ে স্টারমার জানান, “নিহতদের সংখ্যা রোধ করা এবং মানুষের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতেই এই আলোচনা করবেন তিনি।
মূলত গাজায় প্রায় প্রতিদিনই খাদ্য সহায়তার লাইনে দাঁড়িয়ে নিহত হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সহায়তায় গঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের নতুন বিতর্কিত ত্রাণ ব্যবস্থাপনাও কার্যকর না হওয়ায় খাদ্য ও ওষুধ সংকট আরও বেড়েছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজার এক-চতুর্থাংশ মানুষ বর্তমানে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিতে রয়েছেন।
এর আগে গত সোমবার যুক্তরাজ্যসহ ২৮টি দেশ যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলকে ত্রাণ সরবরাহে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, ইসরায়েলের ত্রাণ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা “বিপজ্জনক” এবং তা গাজাবাসীদের “মানবিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করছে”।
ব্রিটিশ লেবার পার্টির বেশ কিছু এমপি স্টারমারের ওপর চাপ তৈরি করেছেন যেন তিনি ইসরায়েলের বিষয়ে আরও কড়া অবস্থান নেন। অনেকে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।স্টারমার বলেছেন, যুক্তরাজ্য তখনই এই পদক্ষেপ নেবে যখন মধ্যপ্রাচ্য সংকটের টেকসই রাজনৈতিক সমাধান আসবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া আরেকটি বিবৃতিতে স্টারমার বলেন, ইসরায়েলের উচিত এখনই পথ পরিবর্তন করা। তিনি আবারো তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি এবং হামাসের হাতে থাকা সব জিম্মিকে শর্তহীনভাবে মুক্তির আহ্বান জানান।
স্টারমার বলেন, “ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রের অধিকার অপরিবর্তনযোগ্য ও মৌলিক”। তিনি মনে করেন, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হলে সেটিই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে প্রথম ধাপ হবে।
অন্যদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ফ্রান্স সেপ্টেম্বরেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। এর আগে একই দিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কাতারে চলা গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনায় থাকা নিজেদের প্রতিনিধি দলগুলো ফিরিয়ে নিয়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসলেও কোনো সমাধান আসেনি।