টানা এক বছর ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী।
২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের কয়েক’শ বন্দুকধারী সীমান্ত পেরিয়ে ইসরাইলে ঢুকে হামলা চালালে প্রায় ১৩শ’ ইসরাইলি নিহত হয়। এর প্রতিশোধ নিতে ঐদিন থেকেই ইসরাইল গাজায় বিমান হামলা শুরু করে। এরপর ট্যাংকবহর নিয়ে স্থল অভিযান চালায় ইসরাইলি সেনারা। গত এক বছরে গাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মসজিদ, আশ্রয় কেন্দ্র বাড়িঘর- কোন কিছুই বাদ যায়নি ইসরাইলী হামলা থেকে। এক বছরে গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে কোটি কোটি টন ধ্বংসস্তুপের আবর্জনায়।
জাতিসংঘ ও গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে, গত এক বছরে প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। সিংহভাগই বেসামরিক নাগরিক। নিহতদের মধ্যে ১১ হাজারই নারী। আর শিশু নিহত হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার। এতিম হয়েছে ১৯ হাজার শিশু। আর এখন পর্যন্ত ১০ হাজার শিশু নিখোঁজ রয়েছে। আহত হয়েছে ৯৬ হাজার গাজাবাসী।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, ইসরাইলি বিমান ও স্থল হামলায় গত এক বছরে গাজায় মোট অবকাঠামোর ৭৫ শতাংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব ধ্বংসস্তুপের পরিমাণ ৪ কোটি ২০ লাখ টনের বেশি। যা সরাতে সময় লাগবে ১৪ বছর। আর অবকাঠামো পুন:নির্মাণে সময় লাগবে ৮০ বছর। ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে ১৯টি। আর ১৭টি হাসপাতালে আংশিক চিকিৎসা সেবা চলছে। ধ্বংস হয়েছে ৮৫ শতাংশ স্কুল ও ৭৯ শতাংশ মসজিদ।
গাজার ২০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ১৯ লাখই এখন গৃহহীন। আশ্রয়কেন্দ্র, তাঁবু বা খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে তাদের। নিরপদ অঞ্চল হিসেবে ঘোষিত এলাকাগুলোতেও হামলা করছে ইসরাইল। জীবন বাঁচাতে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ছুটছে ফিলিস্তিনিরা। তবু বাঁচতে পারছে না। জাতিসংঘের শরণার্থী শিবির হিসেবে ব্যবহৃত ১৪০টি স্কুলভবন ধ্বংস করেছে ইসরাইলি বাহিনী। গাজার বেঁচে থাকা ফিলিস্তিনিরা ভয়াবহ খাদ্য, পানি চিকিৎসা ও ওষুধ সংকটে ভুগছে।
গাজায় হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ এবং যুদ্ধ বন্ধের আহবানে কর্ণপাত করছে না ইসরাইল ও তার পশ্চিমা মদদদাতারা। জাতিসংঘ একাধিকবার যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব পাস হলেও তাতে কোন তোয়াক্কা করেনি ইসরাইল। এখনও উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে নেতানিয়াহু বাহিনী। গাজা ছাড়াও ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরেও অভিযান চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। বন্ধ করে দিয়েছে সেখানকার আল জাজিরা টেলিভিশনের অফিস।
গাজায় ইসরাইলি হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ১ বছর
নিহত ৪১,৮০০
নারী ১১০০০
শিশু ১৭০০০
এতিম হয়েছে ১৯০০০ শিশু
গাজায় ১ বছরে ক্ষয়ক্ষতি
মোট অবকাঠামোর ৭৫ ভাগ ধ্বংস
ধ্বংসস্তুপের পরিমাণ ৪ কোটি ২০ লাখ টন
ধ্বংস্তুপ সরাতে সময় লাগবে ১৪ বছর
পুন:নির্মাণে সময় লাগবে ৮০ বছর