পশ্চিম ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসে প্রাণঘাতী ভাইরাস এইচআইভির অতি বিধ্বংসী একটি ধরনের সন্ধান পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাত দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিবেদনটি। সেখানে বলা হয়েছে ‘ভিবি ভ্যারিয়েন্ট’ নামে পরিচিত এই রূপান্তরিত ধরনটির আগমন ঘটেছে গত শতকের আশির দশকের শেষ থেকে নব্বইয়ের দশকের শুরু পর্যন্ত মধ্যবর্তী কোনো সময়ে; অর্থাৎ গত কয়েক দশক ধরে নেদারল্যান্ডসে টিকে আছে ভিবি ভ্যারিয়েন্ট।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মূল ভাইরাস এইচআইভি ও তার অন্যান্য রূপান্তরিত ধরনগুলোর চেয়ে ভিবি ভ্যারিয়েন্টের বংশবিস্তারের হার ৩ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ গুণ পর্যন্ত বেশি হয়। পাশাপাশি, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও অপেক্ষাকৃত দ্রুত ধ্বংস করতে সক্ষম এই ভাইরাসটি।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেদারল্যান্ডসের ৬ হাজার ৭০০ এইডস রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ১০৯ জন আক্রান্ত ভিবি ভ্যারিয়েন্টে।

তবে নতুন এই ধরনটি অতি মারাত্মক বা বিধ্বংসী হলেও বর্তমানে এইডস রোগের চিকিৎসা যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, তাতে ভিবি ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সম্ভব বলে গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

এই বিজ্ঞানীদলের অন্যতম সদস্য ক্রিস উইমান্ট এএফপিকে এই সম্পর্কে বলেন, ‘আজ থেকে দেড়-দু’ দশক আগে এইডস রোগের যে চিকিৎসা ছিল- সেই পরিস্থিতি বিবেচনায় তখন এটি অনেক বেশি বিধ্বংসী একটি ভাইরাস ছিল।’

‘কিন্তু প্রতিবছরই এইডসের চিকিৎসা উন্নততর হয়েছে। এখনকার সময়ে এইডস চিকিৎসার যে বৈশ্বিক মান- তাতে এই ধরনটিতে আক্রান্ত কেউ যদি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন- তাহলে শঙ্কা অনেক কমে যাবে; অর্থাৎ বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় এই ভাইরাসটি আর মানুষের জন্য বাড়তি হুমকি নয়।’

ক্রিস উইমান্ট আরও বলেন, খুবই দ্রুত ও ঘন ঘন অভিযোজন বা রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ভাইরাসগুলোর মধ্যে একটি হলো এইচআইভি। বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসটির অসংখ্য রূপান্তরিত ধরন শনাক্ত হয়েছে। ভিবি ভ্যারিয়েন্ট সেগুলোর মধ্যে একটি।

এমনকি উদ্ভবের পর থেকে বহুবার অভিযোজনের মধ্য দিয়ে গেছে ভিপি ভ্যারিয়েন্টও। এ পর্যন্ত ৫০০ বার এই ধরনটির রূপান্তর হয়েছে বলে এএফপিকে জানিয়েছেন ক্রিস।

অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম (এইডস) আসলে একই সঙ্গে রোগ এবং রোগলক্ষণসমষ্টি। হিউম্যান ইমিউনো ভাইরাসের (এইচআইভি) সংক্রমণই এইডসের জন্য দায়ী।

এই ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশের পার মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও প্রতিরক্ষাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে, একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু ঘটাতে পারে।

গত শতকের ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এইডসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ওই বছরই দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস এইচআইভিও শনাক্ত করে।

অনিরাপদ যৌনতা, সিরিঞ্জের সূঁচের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে এইচআইভি ভাইরাস। এছাড়া, মায়ের মাধ্যমেও এইডসে আক্রান্ত হয় শিশুরা। কোনো গর্ভবতী নারীর দেহে এইডসের জীবাণু থাকলে তা অনাগত সন্তানকেও সংক্রমিত করে।

সাহারা ও নিম্ন আফ্রিকার অঞ্চলগুলোতে এইডসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ মারা যান এইডসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিশ্বে এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন ১০ লাখ মানুষ।