একই দিনে ফুটবলে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই জয় পেল ভারত। বৃহস্পতিবার হ্যাংজুতে এশিয়ান গেমসে ভারতের কাছে বাংলাদেশ অলিম্পিক দলের হারের দিন কাঠমান্ডুতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে লাল-সবুজের যুবারা হেরেছে ভারতীয়দের বিপক্ষে।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের যুবদলকে পাত্তায় দেয়নি ভারতীয়রা। তাই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে শনিবার বাংলাদেশকে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভুটানকে হারাতেই হবে বাংলাদেশকে।

ডিফেন্সের তিনটি শিশুতোষ ভুলের চড়া মাশুল দিতে হয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দলকে। ম্যাচের প্রথমার্ধেই দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মিনিটেই ডিফেন্স দুর্বলতায় গোল হজম করে টাইগাররা। প্রথম হাফের অতিরিক্ত সময়ে আবারও গোল খায় বাংলাদেশের যুবারা। ডিফেন্ডার ইমরান খানের কাছ থেকে বল ডি-বক্সের মধ্য থেকে কোনাকুনি শটে গোল করেন ভারতের নাওবা মাইতি। দ্বিতীয়ার্ধেও দাপট বজায় রাখে ভারতীয় যুবারা। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের শেষ মুহূর্তে অর্জুন সিং গোল করলে ৩-০ ব্যবধানে হার নিশ্চিত হয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের।

এদিকে হ্যাংজু এশিয়ান গেমসের পুরুষ ফুটবলে ভারতের কাছে অন্তিম সময়ের গোলে হেরে আসরের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ের পথে রয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক দল (অনূর্ধ্ব-২৩ দল)। বৃহস্পতিবার দুপুরে চীনের হ্যাংজু জিয়াওশান স্পোর্টস সেন্টার স্টেডিয়ামে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ১-০ গোলে হারিয়ে এশিয়ান গেমসে টিকে রইল ভারত। বিজয়ী দলের হয়ে ম্যাচের অন্তিম সময়ে পেনাল্টি থেকে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী।

হ্যাংজু এশিয়ান গেমস ফুটবলে টিকে থাকলে হলে ভারতের বিপক্ষে পয়েন্ট পাওয়াটা জরুরি ছিল বাংলাদেশের। ম্যাচটা সেভাবে শুরুও করেছিলেন রহমত মিয়ারা। পুরো ম্যাচে তারা সুনীল ছেত্রীদের চোখে চোখ রেখে খেললেও এক পেনাল্টিতেই সর্বনাশ! মিয়ানমারের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভালো খেলেও দ্বিতীয়ার্ধের আত্মঘাতি গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবারও একই চিত্রের দেখা মিললো। তবে আত্মঘাতি নয়, পেনাল্টি গোলে হারতে হয়েছে লাল-সবুজদের।

নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক চীনের বিপক্ষে ৫-১ গোলে হেরে এবারের এশিয়ান গেমস শুরু করে ভারত। ফলে আসরে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের বিপক্ষে পয়েন্ট পাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না ভারতীয়দের। তাই তো বৃহস্পতিবার ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার চেষ্টা করেন সুনীল ছেত্রীরা। বসে ছিলেন না সুমন রেজা- ফয়সাল আহমেদ ফাহিমরাও। তারাও শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিলে ম্যাচ উপভোগ্য হয়। দু’দলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে লড়াই জমে উঠলেও প্রথমার্ধে গোলের দেখা মেলেনি। ভারতের বিপক্ষেও ভালো ফুটবল খেলেছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। তারা পুরো ম্যাচে একের পর এক আক্রমণ করে ভারতীয় রক্ষণদূর্গে ভীতি ছাড়ালেও ফরোয়ার্ডরা ঠিকঠাক ফিনিশিং দিতে পারেননি বলে গোল পায়নি লাল-সবুজরা।

বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই বাংলাদেশ ও ভারত গোল পেতে মরিয়া হয়ে লড়ে। ৪৮ মিনিটে ভারতীয় ফরোয়ার্ড আব্দুল রাবেহ প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল বাইরে মারেন। ৬৫ মিনিটে ফ্রি-কিক পেয়েও সফল হয়নি ভারত। এসময় বদলি খেলোয়াড় স্যামুয়েল জেমসের ফ্রি কিক শট দুর্দান্তভাবে সেভ করেন মিতুল মার্মা। ম্যাচের ৭২ মিনিটে সবচেয়ে সহজ সুযোগটি নষ্ট হয় বাংলাদেশের। এসময় সতীর্থের লং পাস রিসিভি করে মজিবর রহমান জনি ভারতের এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষকের গায়ে বল মারেন। ম্যাচ যখন নির্ঘাত ড্র’র পথে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই গোল পায় ভারত। ম্যাচের ৮২ মিনিটে নিজেদের বক্সে ভারতীয় ফরোয়ার্ড মিরিন্ডা ব্রেইনকে চার্জ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক রহমত মিয়া। ফিলিপাইনের রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজালে পেনাল্টি পায় ভারত। ৮৫ মিনিটে স্পট কিক থেকে ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী ডান পায়ের শটে গোল করে দলকে মূল্যবান জয় এনে দেন (১-০)। যদিও বলের লাইনে ঝাঁপিয়ে বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল মার্মা অল্পের জন্য নাগাল পাননি। ম্যাচের বাকি সময় বাংলাদেশ আপ্রাণ চেষ্টা করেও গোল শোধ দিতে পারেনি। ফলে টানা দ্বিতীয় হারের স্বাদ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দলকে। রোববার গ্রুপের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক চীনের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।