পৈশাচিক আক্রমণের পাশাপাশি সরকারি এজেন্সিগুলো বেআইনি গুমের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রদলের নেতা তানভীর আহমেদ রবিনকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
শনিবার মধ্যরাতে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি অভিযোগ করেন, গতকাল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানকে তার আজিমপুরস্থ বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ খবর শুনে তার বাসার সামনে সহকর্মীরা উপস্থিত হলে ছাত্রদলের সাতজন কেন্দ্রীয় নেতাকে আটক করে সাদা পোশাকধারীরা। সরকার বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই আবার নতুন করে গুমের মতো মনুষ্যত্বহীন খেলা শুরু করেছে। তাদের পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হলেও বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গোয়েন্দা বিভাগ সেটি স্বীকার করছে না। তাদের একটি ভয়ানক চক্রান্তের ফাঁদে ফেলার জন্যই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে না। উৎপীড়ন করে তাদের মুখ দিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের অপচেষ্টা চলছে বলে সবাই মনে করছে।
এসময় মমিনুল হক জিসানসহ উল্লেখিত ছাত্র নেতাদের অবিলম্বে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার জোর আহ্বান জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব। অন্যথায় দায়ী ব্যক্তিদের চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
রিজভী বলেন, সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে উন্মাদ হয়ে গেছে। বিরোধী দল শূন্য, নির্বাচনের মাঠ শূন্য, ভোটার শূন্য, নিস্তব্ধ পরিবেশে আওয়ামী ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে আরেকটি অভিনব নিশিরাতের নির্বাচনের ছক আঁটতেই বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর কর্মসূচিতে বর্বরোচিত আক্রমণ করছে। তাদের পাশবিক আক্রমণে গণতন্ত্রকামী নেতাকর্মীরা ক্ষতবিক্ষত। এক রক্তপিপাসু হায়েনার মতো আচরণ করছে ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, আগের মতোই গুলি, বন্দুক, দা, ছুরি, রামদা, লাঠি ও হকিস্টিকসহ নানা প্রকার মারণাস্ত্র দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আক্রান্ত করা হচ্ছে। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে এ পর্যন্ত ২০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে। পুলিশের গুলিতে ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী চোখ হারিয়েছে। হাত-পা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীর।
তিনি অভিযোগ করেন, বিশিষ্ট ডেন্টিস্ট জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ডা. জাহিদুল কবির জাহিদসহ পাঁচজনকে কিছুক্ষণ আগে বিনাকারণে নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডা. জাহিদ একজন চিকিৎসক। শুধু বিএনপি’রইবভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য তাকে টার্গেট করে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
রিজভী বলেন, আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে রেখেছে সরকার। সন্ধ্যার সময় দলের কার্যালয়ের সামনে ব্যাপক ধড়পাকড় শুরু করে পুলিশ। দক্ষিণ ছাত্রদলের নেতা তানভীর আহমেদ রবিনকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। তবে স্বীকার করছে না পুলিশ। এটা স্বৈরচারের চিরাচরিত অভ্যাস।
বর্তমান সরকার সমালোচনা সহ্য করতে পারে না অভিযোগ করে রিজভী বলেন, রবিনকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। সভ্য দেশে এমন হতে পারে না। বিরোধী শক্তিকে নির্মূলের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন থাকলে এমন চলত না।
তিনি বলেন, গত দেড় দশক ধরে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের এবং সরকারের সাথে ভিন্নমত পোষণকারীদের গুম করা হয়েছে নির্বিচারে। আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে আবারও জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া বা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর অস্বীকার করা এবং শেখানো বুলি বলার জন্য বর্বরোচিত শারীরিক উৎপীড়ন করা অব্যাহত আছে। এই ক্ষেত্রে সরকার টার্গেট করেছে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির তরুণ যুবকদেরকে।