কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৮ সালের আজকের দিনে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন এ কিংবদন্তী। হিমু আর মিসির আলীর চরিত্র রূপায়ণে শুধু লেখক হিসেবেই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাই পাননি তিনি, এ দেশে অসংখ্য হিমু ও মিসির আলীও সৃষ্টি করেছেন তিনি। কাল্পনিক চরিত্র রূপায়ণে বাস্তবের লাখো হিমু ও মিসির আলী তাঁর ভক্ত।
দিনটি উপলক্ষ্যে প্রতি বছর এদিন রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রিয়জনদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটতেন তিনি। সকাল হলে ভক্তরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতেন প্রিয় লেখককে। দিনব্যাপী নানা আয়োজনে পালিত হতো তার জন্মদিন। এবারও নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে দিনটি। ক্ষণজন্মা এ কথাশিল্পীর ২০১২ সালে জীবন কেড়ে নেয় ক্যানসার। মুগ্ধ পাঠকের হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন তার রচনাবলিতে।
হুমায়ূন আহমেদ ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে সাহিত্যের আকাশে জ্বলে উঠেছিলেন। ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাসটি। পরের গল্পটি শুধুই এগিয়ে যাওয়ার। টানা চার দশকের সৃষ্টিশীলতায় তিনি মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন পাঠককে। সে সময় সহজ-সরল ভাষার সঙ্গে সংলাপধর্মী উপন্যাসটি সহজেই আকৃষ্ট করেছিল সাহিত্যানুরাগীর মনন। কীর্তিমান এই লেখক একই সঙ্গে সাহিত্য ও শিল্পের বর্ণময় পথে হেঁটেছেন। সরল রেখার মতোই সহজ ছিল তার লেখার ভাষা। গল্প বা উপন্যাসের উদ্দীপক বা রহস্যময় বুনটে বিভোর করে রেখেছিলেন পাঠককে। জীবদ্দশায় তুমুল জনপ্রিয়তা দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল হুমায়ুন আহমেদের। বাংলাদেশে তার মতো জনপ্রিয় লেখক কমই এসেছেন। সৌভাগ্যের সোনার কাঠি নিয়ে জন্ম নেয়া একজন লেখক তিনি। লেখালেখি ছাড়া নাটক ও সিনেমা, যেখানেই হুমায়ুন আহমেদ হাত দিয়েছিলেন সাফল্য ছুঁয়ে গেছে তাকে।
হুমায়ূন আহমেদ ‘নন্দিত নরকে’ এবং ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘বাদশা নামদার’সহ দুই শতাধিক উপন্যাস লিখেছেন। তিনি সৃষ্টি করেছেন ‘হিমু’, ‘শুভ্র’, ‘মিসির আলি’র মতো অনবদ্য সব চরিত্র। আশির দশক থেকে শুরু করে তার নির্মিত ‘বহুব্রীহি’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’ এর মতো নাটকগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছেও এখনো একইভাবে জনপ্রিয়। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, সর্বশেষ ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বাংলাদেশের সাহিত্যের এই রাজা।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর সেখানেই হুমায়ূন আহমেদ মাত্র ৬৪ বছর বয়সে চলে যান না ফেরার দেশে। এরপর ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীতে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে হিমু পরিবহনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া হুমায়ূন আহমদের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে সন্ধ্যা ৭টায়, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্যদল বহুবচন মঞ্চায়ন করবে তাদের সামপ্রতিক প্রযোজনা নাটক ‘আমি এবং আমরা’। হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত উপন্যাস আমি এবং আমরা অবলম্বনে, মনু মাসুদের নাট্যরূপে নাটকটির নির্দেশনায় আরহাম আলো। বিকাল ৩টা ৫মিনিটে চ্যানেল আইয়ের চেতনা চত্বর থেকে সরাসরি সমপ্রচার করা হবে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হসপিটাল চ্যানেল আই হুমায়ূন মেলা। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় সেরাকণ্ঠ ও ক্ষুদে গানরাজদের অংশগ্রহণে শুরু হবে অনুষ্ঠানমালা। বিকাল ৫টায় হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’। রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে প্রচার হবে রাজিয়া সুলতানা জেনির রচনা ও সালাহউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় বিশেষ নাটক আমি হুমায়ূন আহমেদ হতে চাই।