বাংলাসাহিত্যের অন্যতম কবি নির্মলেন্দু গুণের ৭৯তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৫ সালের আজকের দিনে নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার কাশবন গ্রামে নন্দিত এই কবি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সংগ্রাম, প্রেম-বিরহ, জীবন-প্রকৃতি, স্বপ্ন- সব তার কবিতায় ধরা দিয়েছে।

কবি নির্মলেন্দু গুণ কবিতার পাশাপাশি গল্প এবং ভ্রমণসাহিত্যও লিখেছেন। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম হলো- প্রেমাংশুর রক্ত চাই, কবিতা, অমীমাংসিত রমণী, দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী, বাংলার মাটি বাংলার জল, তার আগে চাই সমাজতন্ত্র, দূর হ দুঃশাসন, চিরকালের বাঁশি, দুঃখ করো না, বাঁচো, আনন্দ উদ্যান, পঞ্চাশ সহস্র বর্ষ, প্রিয় নারী হারানো কবিতা, শিয়রে বাংলাদেশ, ইয়াহিয়াকাল, আমি সময়কে জন্মাতে দেখেছি।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি নির্মলেন্দু গুণ ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে নেত্রকোণার কাশবন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নির্মলেন্দু গুণের মা বীণাপাণি ও বাবা সুখেন্দু প্রকাশ গুণ। বারহাট্টার করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন নির্মলেন্দু গুণ। এর আগেই নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতা ‘নতুন কাণ্ডারী’।

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসিও পাস করেন তিনি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে ভর্তির জন্য মনোনীত হলেও ঢাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হওয়ায় তিনি গ্রামে চলে যান। পরে ফিরে এসে দেখেন, তার নাম তালিকা থেকে লাল কালি দিয়ে কেটে দেয়া হয়েছে। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রাইভেটে বিএ পাস করলেও সার্টিফিকেট তোলেননি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, শ্রেণিসংগ্রাম, প্রেম-বিরহ, জীবন-প্রকৃতি আর স্বপ্ন দেখার তীব্র ঘোর তার কবিতার প্রাণশক্তি।

কবিতার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় গল্প, আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ও ভ্রমণসাহিত্যও রচনা করেছেন নির্মলেন্দু গুণ। প্রথম কবিতার বই ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ লিখেই কাব্যজগতে নিজের আসন স্থায়ী করে নেন তিনি। এ গ্রন্থের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা ‘হুলিয়া’ কবিতাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। পরবর্তী সময়ে এর ওপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এ ছাড়া তার ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য।

সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য নির্মলেন্দু গুণ ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।