অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় হাইকোর্টের রায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) হাজি মোহাম্মদ সেলিমকে। এর আগে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। আজ রোববার (২২শে মে) বিকেল তিনটার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন হাজি সেলিম। এছাড়া কারাগারে উন্নত চিকিৎসা ও প্রথম শ্রেণির ডিভিশন চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আরও দু’টি আবেদন করেন তিনি। কারাবিধি অনুযায়ী হাজি সেলিমকে ডিভিশন ও চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশও দিয়েছে আদালত।
এর আগে দুপুর দুইটার দিকে তিন ছেলেকে নিয়ে গাড়িতে করে হাজী সেলিম আদালত প্রাঙ্গণে আসেন। সেখানে আগে থেকে তার অনুসারীরা অপেক্ষা করছিল এবং বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর হাজী সেলিম প্রবেশ করেন আদালতের ভেতরে। দুপুর থেকেই আদালতের বাইরে তার সমর্থক ও নেতাকর্মীরা ভিড় শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি ছিল আদালতের মূল ফটকে।
আবেদনে হাজী সেলিমের আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে ওপেন হার্ট সার্জারির সময় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন যাবত বাক-শক্তিহীন অবস্থায় রয়েছেন হাজী সেলিম। তিনি দেশ ও বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। জেলে থাকলে চিকিৎসার অভাবে ও বাক-শক্তিহীনের কারণে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ কারণে যে কোনো শর্তে তার জামিন আবেদন করছি। জামিন পেলে তিনি পলাতক হবেন না। তাই আপিল শর্তে আত্মসমর্পণপূর্বক তার জামিন আবেদন করছি।
গত ২৫শে এপ্রিল দুপুর ৩টার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলামের আদালতে হাইকোর্ট থেকে মামলার নথি এসে পৌঁছায়। এদিন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে রায়ের নথি পাঠানো হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, আইন অনুযায়ী আজ থেকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আর হাইকোর্টের রায়ের ফলে তার সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা নেই।
জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালের ২৪শে অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এরপর ২০০৮ সালের ২৭শে এপ্রিল হাজী সেলিমকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পরে ২০০৯ সালের ২৫শে অক্টোবর হাজী সেলিম এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের দোসরা জানুয়ারি হাইকোর্ট ১৩ বছরের সাজা বাতিল করে রায় দেন।
এরপর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে দুদক। শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের ওই রায় বাতিল করেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায় দেন হাইকোর্ট। সেখানে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১৩ বছরের কারাদণ্ড কমিয়ে ১০ বছর বহাল থাকে।
