প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ব্যবসার মাধ্যমে নিজের জন্য টাকা কামিয়ে নিজেকে ধনী করা যেতে পারে, অথবা ব্যবসা করে পৃথিবীর যত সমস্যা আছে, তা দূর করা যেতে পারে, এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ইচ্ছা। তিনি বলেন, ‘এটাকে বলে সামাজিক ব্যবসা। এর মূল উদ্দেশ্যই অর্থ আয়ের চেয়ে সমস্যার সমাধান করা।’
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় দুপুরে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের বি২৩৯ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে সভ্যতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তা আত্মবিনাশী। এই সভ্যতা কেবল বর্জ্য উৎপাদন করছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পৃথিবীকে বদলানোর শক্তি তোমাদের মধ্যে আছে। ভুল পথে সেই শক্তির অপচয় করা ঠিক হবে না। জীবন অনেক ছোট। তোমরা ইতোমধ্যে তারুণ্যের সীমা অতিক্রম করেছো। এখনই সময় পৃথিবীকে বদলানোর। নতুন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হও পৃথিবীকে বদলাতে, অস্ত্র নিয়ে নয়।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দারিদ্র্যতা গরিব মানুষের সৃষ্টি নয়। তাহলে কারা করেছে? আমরা যেই ব্যবস্থা পৃথিবীর জন্য প্রচলন করেছি সেটি। আমরা এর বিপরীত ব্যবস্থা যেটা দারিদ্র্যতা সৃষ্টি করবে না, সেটা তৈরি করছি না। আমাকে বিভিন্ন বিজনেস স্কুল থেকে আমন্ত্রণ জানান হয়। আমি শুধু গিয়ে বলি যে,. আমরা ভুল পথে হাঁটছি। আমি বলি যে, আপনারা ব্যবসা শেখাচ্ছেন মানুষকে গরিব করার জন্য। আমি আপনাদের থামতে বলছি না। শুধু বলছি আপনারা শুধু টাকা কামানোর কথা শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন। আপনারা নিশ্চিত করেন যে, আপনাদের শিক্ষার্থীরা যেসব কোম্পানিতে চাকরি করবে, সেসব কোম্পানি যেন অনেক সফল হয়, অনেক আয় করে। আমি শুধু বলছি, আপনারা কেন একটা আলাদা অনুষদ কিংবা বিভাগ তৈরি করছেন না, সামাজিক ব্যবসার জন্য। তরুণদের শেখান কীভাবে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে যেকোনও সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।’
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘চাকরি করা কারও জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না। এটি একটি ভুল দিকে যাওয়ার মতো অবস্থা। মানুষ কারও অধীনে কাজ করার জন্য জন্ম নেয়নি। কেন আমি চাকরি করে দাসত্বের জীবন বেছে নেবো। কারও কাছ থেকে নির্দেশ নেওয়া মানুষের সঙ্গে যায় না। তাহলে আমরা কী করবো। আমি বলি, ব্যবসার প্রচলিত পদ্ধতি একদম ভুল। এটি দাসত্ব তৈরি করে। এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র মুনাফা কীভাবে বাড়ানো যায়— সেই পথ দেখানো হয়। শুধুমাত্র একটি পরিবর্তন সব প্রেক্ষাপট পাল্টে দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সামাজিক ব্যবসার প্রচলন করার অভ্যাস সবার মধ্যে নেই। অর্থ আয় করায় হয়তো সুখ নিয়ে আসতে পারে, কিন্তু অন্যকে, পুরো পৃথিবীকে খুশি করার মধ্যে ব্যাপক সুখ আছে। সুতরাং, নিজেই বিচার করুন— কোন ধরনের সুখ আপনার প্রয়োজন। আমি মনে করি, সবার কাছে একটি স্বতন্ত্র আইডিয়া আছে, যা কিনা পুরো পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে। কিন্তু কেউ সেই পথে হাঁটে না। কারণ সেই পথের প্রচলন নেই, প্রচলন আছে শুধু মুনাফা অর্জনের।’
‘তিন শূন্যের একটি বিশ্ব নির্মাণ: শূন্য নেট কার্বন নির্গমন, শূন্য সম্পদ মজুদ এবং শূন্য বেকারত্ব’ শীর্ষক অধিবেশনের আয়োজন করে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বের ওপর বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা।
বক্তব্য দেওয়া শেষে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল সানির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
এতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত থাকবেন।