মাত্র এক মাস আগে পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে টিকে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্তী বরিস জনসন। তবে তার পদত্যাগের জন্য দলীয় এমপিদের চাপ ছিল বরাবরই। এবার আর সে চাপ সামলাতে পারলেন না ক্ষ্যাপাটে স্বাভাবের জনসন। কেলেংকারির অভিযোগ মাথায় নিয়ে দলীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করতেই হলো তাকে।

বৃহস্পতিবার (৭ই জুলাই) যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে জনসন বলেন, ‘দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণের প্রক্রিয়া এখন থেকেই শুরু করা উচিত। আর নতুন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাসীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই অন্তর্র্বতী সময়ে একটি নতুন মন্ত্রিসভা নিয়োগ করা হবে। আজ থেকেই এই বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করব আমি। পদত্যাগের ঘোষণায় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদে আর থাকতে না পারার জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন বরিস জনসন। এদিকে আলোচনা চলছে কে হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ বলছে, এই দৌড়ে এককভাবে কেউই এগিয়ে নেই। তবে আলোচনায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির একাধিক নেতা।

দলের তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে ৪৬ বছর বয়সী লিজ ট্রাস’র । গত সেপ্টেম্বর থেকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে লিজ ট্রাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনেও তার অবদান উল্লে­খযোগ্য।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাক একসময় বরিস জনসনের উত্তরসূরী হওয়ার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নাদিম জাহাবী যুক্তরাজ্যের নতুন চ্যান্সেলর। তার জন্ম বাগদাদের একটি কুর্দি পরিবারে। সাদ্দাম হুসেইনের শাসনামলে ইরাক ছেড়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যখন পাড়ি জমান, তখন ঠিকমতো ইংরেজিও বলতে পারতেন না। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তার জোরে আজ তিনি মিলিয়নিয়ার। ২০১০ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রবেশের আগে পাঁচ বছর পোলিং ফার্ম ইউগভের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন। তেল শিল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে ৫৫ বছর বয়সী এ নেতার।

কনজারভেটিভ পার্টির শীর্ষ নেতাদের কাতারে বেন ওয়ালেসের নাম উঠে এসেছে বেশি দিন হয়নি। তবে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া এবং আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর লোকজন সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।  ২০১৫ সালে ডেভিড ক্যামেরনের সরকারের জুনিয়র মন্ত্রী থেকে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে পদোন্নতি পান ৫২ বছর বয়সী এ নেতা।

ব্রিটিশ সরকারের হাল ধরার মতো আরেকজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক হলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাজিদ জাভিদ। সদ্যই যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সরকারের ছয়টি বিভাগে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

বর্তমান মন্ত্রিসভার বাইরে থেকে কেউ যদি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, তবে তার এক নম্বর দাবিদার পেনি মর্ডান্ট । ৪৯ বছর বয়সী এ নেতা কনজারভেটিভ পার্টির সবচেয়ে জনপ্রিয় এমপিদের একজন।

এছাড়াও যুক্তরাজ্যের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান টম টুগেনধাট, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল প্রমুখ।