ঢাকার বাজারে বিক্রি হওয়া কোমল পানীয়তে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মাত্রাতিরিক্ত উপাদান রয়েছে। চিনি, ক্যাফেইন, ভারী ধাতুযুক্ত কোমল পানীয় অসংক্রামক রোগের পাশাপাশি শিশুদের স্থূলতা বাড়াচ্ছে। এছাড়া ফ্রেঞ্জ ফ্রাই এবং ফ্রায়েড চিকেন প্রক্রিয়াকৃত প্যাকেটজাত খাবারেও ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে।

বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষ্যে খাদ্যে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি (ফুড হ্যাজার্ড) নিয়ে তিনটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মিল্টন হলে সোমবার ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এপিডেমিওলজি বিভাগের উদ্যোগে এক সেমিনারে এ ফল প্রকাশ করা হয়।

বিএসএমএমইউ’র পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের ডা. এএইচএম গোলাম কিবরিয়া কোমল পানীয় নিয়ে গবেষণা করেন। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বোতলজাত ব্র্যান্ডের দশটি কোমল পানীয় এবং পাঁচটি এনার্জি ড্রিংকের নমুনা সংগ্রহ করেন তিনি। প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পানীয়ের পিএইচ মাত্রা ৩-এর নিচে ছিল। এসিডিক মাত্রা ৩-এর নিচে থাকায় তা দাঁতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। কোমল পানীয়ের তুলনায় এনার্জি ড্রিংকে ক্যাফেইনের মাত্রা বেশি ছিল।

এ ছাড়া ঢাকার বাজারে পাওয়া যায় এমন ফ্রেঞ্জ ফ্রাই এবং ফ্রায়েড চিকেন নিয়ে গবেষণাটি করেন ডা. সাজিয়া ইসলাম। এতে পাঁচটি সর্বোচ্চ বিক্রীত ফ্রেঞ্জ ফ্রাই এবং ফ্রায়েড চিকেনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ফ্রেঞ্জ ফ্রাইয়ের একটি পরিবেশনে (১০০ গ্রাম) গড়ে পাওয়া গেছে সোডিয়াম-০.৪৫ গ্রাম, আর্সেনিক-০.০৯৩ মি. গ্রাম, ট্রান্স ফ্যাটি এসিড-০.১১ গ্রাম, সিসা-০.০০৩ মি.গ্রাম। ফ্রায়েড চিকেনের একটি পরিবেশনে (১০০ গ্রাম) গড়ে পাওয়া গেছে সোডিয়াম-০.৪৬ গ্রাম, আর্সেনিক-০.০৫৩ মি. গ্রাম এবং সিসা ০.০০৬ মি. গ্রাম। এসব উপাদান অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি। ফলে এগুলো উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, বিষণ্নতা, স্ট্রোক, ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এগুলো খাওয়ার ফলে বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্থূলতার পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি পরে অসংক্রামক রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

বাংলাদেশে সর্বাধিক প্রচলিত প্রক্রিয়াকৃত প্যাকেটজাত খাবারে লবণ, চিনি ও চর্বির পরিমাণ মূল্যায়ন ও খাদ্যের লেভেলে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা যাচাইয়ে আরেকটি গবেষণা করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী। তার গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ পরিমাণে লবণ, চিনি, স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড (এসআরএ) ট্রান্স ফ্যাটি এসিড (টিআরএ) এবং ক্যালরি থাকায় এ খাবারগুলো স্থূলতা ও খাদ্য-সম্পর্কিত অসংক্রামক রোগের প্রধান কারণ।

বাংলাদেশের আটটি প্রশাসনিক বিভাগে পরিচালিত পারিবারিক জরিপ এবং বাজার সমীক্ষার মাধ্যমে মোট ৯টি সর্বাধিক প্রচলিত প্রক্রিয়াকৃত প্যাকেটজাত খাবার চিহ্নিত করা হয়েছিল। কোনো ব্র্যান্ডের পণ্যই টিএলএল সিস্টেম অনুযায়ী ক্ষতিকর উপাদানগুলোতে সবুজ (কম পরিমাণে) এবং এইচএসআর স্কিম অনুযায়ী ৪ বা তার বেশি স্টার পায়নি।