বগুড়ার গাবতলীতে শিশু সানজিদা খাতুন (৬) হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে দুই স্কুলছাত্র। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তারা বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসমা মাহমুদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সানজিদার বাবা রাজমিস্ত্রি শাহীন প্রামাণিক বৃহস্পতিবার সকালে গাবতলী থানায় হত্যা মামলাটি করেন।

আদালত তাদের যশোরের পুলেরহাটে শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। জবানবন্দি দেওয়া দুজন হলো- নবম শ্রেণির ছাত্র রিয়াদ প্রামাণিক (১৫) ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র শুভ প্রামাণিক।

বগুড়ার আদালতের ইন্সপেক্টর সুব্রত ব্যানার্জী জানান, দুই কিশোর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আদালতে অপরাধের বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

গাবতলী থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম জানান, কিশোর রিয়াদ ও শুভ অপহরণ-হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তারা ভারতীয় টিভির সনি চ্যানেলে ক্রাইম প্যাট্রোল দেখে অপহরণের কৌশল রপ্ত করেছে বলে জানিয়েছে। আর টাকা হাতিয়ে নিতে শিশুটিকে অপহরণের পর হাত-পা বাঁধে ও মুখে স্কচটেপ লাগায়। এতে শ্বাসরোধে শিশু সানজিদা মারা যায়। পরে শুভর বাড়িতে স্টিলের বাক্সে লাশ গুম করা হয়।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, শিশু সানজিদা খাতুন গাবতলী উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের লাঠিমারঘোন উত্তরপাড়ার রাজমিস্ত্রি শাহীন প্রামাণিকের মেয়ে। প্রতিবেশী প্রবাসী উজ্জ্বল প্রামাণিকের ছেলে স্থানীয় স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র রিয়াদ প্রামাণিক ও তার বন্ধু একই এলাকার সাজু প্রামাণিকের ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র শুভ প্রামাণিক টেলিভিশনে ক্রাইম প্যাট্রোল দেখে কীভাবে অপহরণ করতে হয় তা শেখে। শুভ তার খালার বিয়ে উপলক্ষে নতুন জামা-কাপড় কেনার টাকার জন্য প্রতিবেশী শিশু সানজিদা খাতুনকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। সে এ বিষয়ে তার বন্ধু রিয়াদের সঙ্গে আলোচনা করে।

বুধবার সকালে সানজিদা বাড়ির উঠানে খেলছিল। বেলা ১০টার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সে পুকুরে ডুবে মারা গেছে সন্দেহে পরিবারের সদস্যরা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পুকুরে নেমে তল্লাশি করলেও সানজিদার সন্ধান পাওয়া যায়নি। দুপুরে প্রতিবেশী এক নারীর মোবাইল ফোনে কল করে সানজিদাকে অপহরণের কথা জানানো হয়। শিশুটিকে ফিরে পেতে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। ওই নারী বিষয়টি সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিককে জানান। তিনি ওই নম্বরে ফোন দিলে তার কাছেও মেয়েকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি করা হয়। কয়েকবার কথা বলার পর অপহরণকারীরা সর্বশেষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গ্রামের একটি কালভার্টের নিচে টাকাগুলো রেখে আসতে বলা হয়। এছাড়া বিষয়টি পুলিশকে না জানাতে হুমকি দেওয়া হয়। এরপর শাহীন প্রামাণিক বিষয়টি গাবতলী থানাকে জানান।

তিনি পুলিশের পরামর্শে টাকা নিয়ে সেখানে যান। এর আগে, গাবতলী থানা পুলিশ আশপাশে লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক ব্যক্তি সেই কালভার্টের কাছে এসে লাইট জ্বালিয়ে টাকা খুঁজতে থাকে। তখন পুলিশ ও সানজিদার স্বজনরা সেখানে গিয়ে তাকে ধরে ফেলেন। পরে দেখা যায়, সে প্রতিবেশী প্রবাসী উজ্জ্বলের ছেলে রিয়াদ। জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াদ অপহরণের কথা স্বীকার করে। এরপর রাত ১১টার দিকে সাজুর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে স্টিলের বাক্স থেকে শিশু সানজিদার হাত-পা বাঁধা ও মুখে স্কচটেপ পেঁচানো লাশ উদ্ধার করে। রাতেই পাশের কদমতলী গ্রামে নানার বাড়ি থেকে রিয়াদের সহযোগী শুভকে গ্রেফতার করা হয়।