ক্ষমতা ধরে রাখতে সরকার নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে চলছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বুধবার চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপিকে দমনে ক্ষমতাসীনদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানেই আওয়ামী লীগ সরকারকে হটানোর ঘোষণা আবারও দেন দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা।
রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ সরকারের হাত থেকে জনগণ মুক্তি চায় উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করবে বিএনপি। রাজপথে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শিগগিরই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন করা হবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে জাতির সাথে সহিংস প্রতারণা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতা ধরে রাখতে সরকার এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কারচুপির নির্বাচন প্রমাণ করেছে ব্যর্থ ও অন্তঃসারশূন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতি। মানুষ ভোট বর্জন করে বিএনপির আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে, গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। এটি বিএনপির রাজনৈতিক সফলতা। মানুষের কাছে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে আওয়ামী লীগ। দেশবাসী বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে এটা উপলব্ধি করি।
বিএনপির সকল কর্মসূচিতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতার ফসল বলেও মনে করেন এ নেতা।
এর আগে গেলো ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হয় ২৯৯ আসনে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি, ১৪ দলীয় শরিক জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি, কল্যাণ পার্টি একটি আসন পায়। জাতীয় পার্টি ১১টি আসন পেয়ে আবারও প্রধান বিরোধী দল হয়েছে। তবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬২টি আসন পান স্বতন্ত্র এমপিরা।
এ নির্বাচনকে বানরের পিঠা ভাগের নির্বাচন আখ্যা দিয়ে তিনি দাবি করেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির সিনিয়র নেতাসহ হাজারও কর্মী এখন কারাগারে রয়েছে।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এ নেতা বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি মোকাবেলা করছে সহিংস সশস্ত্র শেখ হাসিনার সরকারকে। প্রতিদিন পুলিশি নির্যাতন ও বিচার বিভাগের অবিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিএনপিকে। বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন মধ্যযুগের বর্বরতাকে হার মানাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ভীত হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে পরাজয়ের ভয়ে বিএনপির ওপর হামলা নির্যাতন করছে।
অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় হতো এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব সরকারকেই আরও মারমুখী করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে মরিয়া সরকার। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় হতো। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব সরকারকেই আরও মারমুখী করেছে। ক্ষমতা ধরে রাখতে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, অসম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাÐে লিপ্ত সরকার।’
মঈন খান বলেন, ‘গণতন্ত্র রক্ষায় চলমান আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। ক্ষমতার উৎস দেশের মানুষ, আওয়ামী লীগ বিদেশি শক্তিতে টিকে আছে। আন্দোলন অব্যাহত থাকলে ফ্যাসিবাদের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
সরকার মেগাপ্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ করে ড. মঈন খান বলেন, ‘সরকারের ব্যর্থতায় বৈদেশিক ঋণের বোঝা বাড়ছে। উন্নয়নের নামে লুটপাটে ব্যস্ত আওয়ামী লীগের নেতারা। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিয়ন্ত্রণহীন বাজার, এসবে সরকারের ভ্রæক্ষেপ নেই।’
এ সময় গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায় জনগণ। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করবে বিএনপি। রাজপথে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শিগগিরই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইমলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সিরাজুদ্দিন আহমেদ, আবুল খায়ের ভুইয়া, সুকোমল বড়ুয়া, তাহসিনা রুশদির লুনা, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও হারুন অর রশিদসহ অন্যরা।