বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি না দেওয়ার বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করেছেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ ক্ষেত্রে কোনও রাজনীতি হয়নি বলেও দাবি করেছেন তিনি।

বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে প্রায় দেড় মাস ধরে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার আবেদন করা হয়।

তবে আইন মন্ত্রণালয় এই আবেদন নাকচ করে দিয়ে জানিয়েছে, দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার সাজা নির্বাহী আদেশে মওকুফ আছে। এই অবস্থায় তার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার সুযোগ নেই। তাকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে হলে আবার কারাগারে গিয়ে আদালতে আবেদন করতে হবে।

বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছিল। তিনি শর্ত মেনে বিদেশে চিকিৎসা নেবেন না।

ফখরুলের সেই অভিযোগের জবাব দিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আইনমন্ত্রী। তিনি জানান, আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ নেই। তাকে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। এই ইস্যুতে বিএনপি মিথ্যাচার করছে।

তিনি বলেন, ‘এটা আইনি ব্যাপার, এখানে রাজনীতির কোনও প্রশ্ন নেই। তার পরিবার দরখাস্ত করেছিল, সেটা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আইনে কোথাও নেই যে এই দরখাস্তে তাকে বিদেশে যাওয়ার পারমিশন দেওয়া যায়। বিদেশ যেতে পারবেন না বলে আগেই শর্ত দেওয়া ছিল, এখন সেটিকে পরিবর্তন করার কোনও সুযোগ নেই।’

শর্ত জুড়ে দেওয়া যৌক্তিক কিনা, এ প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করেছি যৌক্তিক। তার কারণ হচ্ছে—তখন তার যে অসুস্থতা ছিল, যতটুকু আমাদের জানানো হয়েছিল, তাতে এটা আমরা যে মনে করেছি যৌক্তিক, তা প্রমাণিত হয়েছে ২০২০ সালে থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তার চিকিৎসা সফলভাবে দেশে হয়েছে।’ এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস এবং আইন সচিব গোলাম সারওয়ার উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়ে আইনমন্ত্রী কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইলে দোষ স্বীকার করে চাইতে হয়। বিষয়টি যিনি ক্ষমা চাইবেন তার বিষয়। এটা হচ্ছে সাংবিধানিক অধিকার। যে কেউ রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারেন।’

২০০৮ সালে কোনও শর্ত না দিয়েই শেখ হাসিনাকে জামিন দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আইন মেনেই তিনি (হাসিনা) বিদেশ গিয়েছিলেন এবং দেশে ফিরে এসেছেন। মির্জা ফখরুলের ভালো করে জেনে-শুনে ও বুঝে জনগণকে তথ্য দেওয়া উচিত।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনা যখন বিদেশে গিয়েছিলেন, তিনি তখন কোনও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বা কয়েদি ছিলেন না। তিনি তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সবকটি মামলায় নিঃশর্ত জামিনে ছিলেন।’