দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তি আরও সুদৃঢ় হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে নির্বাচনে জনগণ ও গণতন্ত্রের জয় হয়েছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পথ’ পরিহার করে গঠনমূলক কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

তিনি বলেছেন, “গত দেড় দশকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। ভবিষ্যতে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য আমাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

“একইসঙ্গে, কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমাল ও জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সকল গুজব ও অপপ্রচারের বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করে জনগণকে সম্পৃক্ত রেখে যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে হবে।”

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরুতে মঙ্গলবার সংসদে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।প্রতিবারের মত এবারও মন্ত্রিসভার ঠিক করে দেওয়া ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়েন রাষ্ট্রপতি।

কোনো সংসদের প্রথম এবং নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেওয়ার বিধান রয়েছে। অধিবেশনের পুরোটাজুড়ে এ ভাষণের ওপর আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হবে।

গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত এই সংসদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রয়েছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নিয়ে মঙ্গলবার যাত্রা করেছে দ্বাদশ সংসদ।

নিয়ম অনুযায়ী, অধিবেশনের প্রথম দিন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মনোনয়ন ও শোকপ্রস্তাব উত্থাপনের পর ভাষণ দিতে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এটাই সংসদে তার প্রথম ভাষণ।

স্পিকার রাষ্ট্রপতির আগমনের ঘোষণা দিলে সশস্ত্র বাহিনীর একটি বাদক দল বিউগলে ‘ফ্যানফেয়ার’ বাজিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সম্ভাষণ জানান। তিনি ঢোকার পর নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। সংসদে রাষ্ট্রপতির জন্য স্পিকারের ডান পাশে লাল রঙের গদি সম্বলিত চেয়ার রাখা হয়।

স্পিকারের অনুরোধের পর রাষ্ট্রপতি তার লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন। স্পিকারের আসনের বাম পাশে রাখা ‘রোস্ট্রামে’ দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন তিনি।

ভাষণের শুরুতেই মো. সাহাবুদ্দিন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যদের অভিনন্দন জানান।

তিনি বলেন, “দেশের গণতন্ত্রের জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় হয়েছে দেশের জনগণের, জয় হয়েছে গণতন্ত্রের।”

এর আগে বিকেল তিনটায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশ শুরু হয়। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের পরে প্রথম দিনের অধিবেশন মুলতবি করা হয়।

২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত একাদশ সংসদের মেয়াদ থাকায় ৩০ জানুয়ারি সংবিধানের ৭২ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দ্বাদশ সংসদের প্রথম সংসদ অধিবেশন আহ্বান করেন রাষ্ট্রপতি।