গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই গত তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করতে পেরেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণতান্ত্রিক ধারা না থাকালে দেশের উন্নয়ন হতো না বলে জানান তিনি।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজউকের ১১টি প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর রমনা পার্কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশ ও দেশের জনগণের জন্য আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। আমরা সেই দায়িত্ববোধ থেকেই দেশ চালিয়ে যাচ্ছি।

সরকারপ্রধান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তুলবো। আমরা ই-গভর্নেন্স চালু করবো, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করবো।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এটা করা সম্ভব হয়েছে এ কারণেই যে, দেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন শুধু আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায়ও আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে।

৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষম দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে তার সরকার ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো যাতে পূরণ হয়, তার নিশ্চয়তা রেখেই সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে এবং তা সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের জীবনে যাতে একটা স্বাচ্ছন্দ বোধ আসে তার ব্যবস্থাও করে যাচ্ছে।

সরকার প্রধান বলেন, তার সরকারের উন্নয়ন কেবল রাজধানী কেন্দ্রিক নয়, বরং একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা বা ইন্টারনেট কানেকশন পৌঁছে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপন করে আমরা স্যাটেলাইট যুগেও প্রবেশ করেছি। তাছাড়া ’৯৬ সালে যে বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম মাত্র ১৬শ’ মেগাওয়াট তাকে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট পর্যন্ত বৃদ্ধি করার পর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে দেখি তা আবার ৩ হাজারে (মে.ও.) নেমে গেছে। সেখান থেকে আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের প্রত্যেকটি ঘরকে আমরা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করতে পেরেছি। প্রায় ২৪ হাজার মে. ও. বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা মানুষকে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। পাশাপাশি মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদুৎ, পানি ও জ্বালানির ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ইংল্যান্ডে প্রায় দেড়শ ভাগ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমন অবস্থা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কাজেই এখানেও আমি সবাইকে অনুরোধ করবো বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সবাই আবার একটু সাশ্রয়ী হবেন।

দীর্ঘস্থায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২৩ সালে বিশ্ব সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দা প্রত্যক্ষ করবে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস উল্লেখ করে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর এবং প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার আহবানও পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের খাবার উৎপাদন বাড়াই তবে অর্থনৈতিক মন্দা আঘাত করতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও তার সরকারের বাস্তব সম্মত ও সমেয়োপযোগী উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও জিডিপিতে গড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে সফলভাবে চলছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর যিনি সেনা প্রধান হলেন, তিনিই একদিন নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিলেন। এই ঘোষিত রাষ্ট্রপতি, অনির্বাচিত লোক দিয়ে কখনো দেশের উন্নতি হয় না, এটা প্রমাণিত সত্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে সরকারে আসার পর জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করেছি। জনগণের উন্নয়ন অন্তত আমরা করতে পেরেছিলাম। বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বাক্ষরতার হার, খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠন করি। আমাদের যে পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। বাংলাদেশ ‘২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। যদি এই ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক ধারা না থাকতো তাহলে এদেশ কিন্তু এতো উন্নত হতে পারত না।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।