ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। এতে করে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৫২ হাজার ৬০০ জনে পৌঁছে গেছে। এছাড়া গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ২৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৬ মে) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এবং বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

আল জাজিরার তথ্যমতে, সোমবার গাজা জুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ৫৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যা নিশ্চিত করেছে স্থানীয় হাসপাতাল ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ। একই দিনে ১১৯ জন আহত হয়েছেন বলে জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এখন পর্যন্ত আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৬১০ জনে। ধ্বংসস্তূপের নিচে ও রাস্তায় পড়ে থাকা বহু মানুষের কাছে এখনও উদ্ধারকারীরা পৌঁছাতে পারেননি। গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, অবরোধ চলার ৬৫তম দিনে এসে হাসপাতালগুলোর জ্বালানি শেষ প্রায়—মাত্র ৪৮ ঘণ্টা সময় বাকি আছে। হাজারো অসুস্থ ও আহত মানুষের জীবন এখন মৃত্যুর মুখে।

গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যদিও এর আগে জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল তারা। দু’মাস স্থায়ী সে শান্তি ভঙ্গ করে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে ফের হামলা চালায় ইসরায়েল। কারণ হিসেবে দেখানো হয় গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার প্রশ্নে হামাসের সঙ্গে মতানৈক্য। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং আগ্রাসী কৌশলেরই ধারাবাহিকতা। মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেই আবার শুরু হয় রক্তপাত—যার মূল শিকার সাধারণ অসহায় ফিলিস্তিনি জনগণ।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই গণহত্যামূলক অভিযানে ইসরায়েল যে মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তা নজিরবিহীন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এরই মধ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ইসরায়েলের এই নির্যাতনের ফলে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং অধিকাংশ অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। অনেক এলাকায় এখন খাদ্য, পানি ও ওষুধের সঙ্কট চরমে।

গাজার পরিস্থিতি শুধু একটি ভূখণ্ডের সংকট নয়—এটি মানবতার এক গভীর ক্ষতচিহ্ন। প্রতিদিনের প্রাণহানি, ধ্বংস আর অভাবের মাঝে কাতর গাজাবাসী এখন আন্তর্জাতিক সহানুভূতি নয়, কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষায়। এই সংকটে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতা আর বিলম্ব কেবল আরও মৃত্যু ও ধ্বংস ডেকে আনছে। এখন সময় এসেছে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করার—যাতে গাজা শুধু আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনের শিরোনাম না হয়ে উঠে মানবিক ন্যায়বিচারের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি, আল-জাজিরা