দখলদার ইসরায়েলের টানা আগ্রাসন আর অবরোধে বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। গত ১৮ মাস ধরে তাদরে অবিরাম হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। সামরিক অভিযানের পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রবেশেও বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। এর ফলে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে গাজার শিশুরা।
বার্তাসংস্থা আনাদোলুর খবরে জানা গেছে, পোলিও প্রতিরোধে গাজায় যে টিকাদান কর্মসূচি চলছিল, তা এখন বন্ধ হয়ে গেছে ইসরায়েলের বাধার কারণে। ফলে সেখানকার শিশুরা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধে ত্রাণ প্রবেশ করতে না পারায় তীব্র খাদ্য ও ওষুধ সংকটে তো ভুগছেই গাজাবাসী। শঙ্কা বাড়ছে রোগ-বালাই ও মহামারির। অন্যদিকে পোলিও টিকাদান কর্মসূচিও বন্ধ থাকায় বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা বিরাজ করছে গাজা জুড়ে; শারীরিক অক্ষমতার ঝুঁকিতে আছে প্রায় ৬ লাখ শিশু।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খলিল দেকরান বলেছেন, অবিলম্বে পোলিও ভ্যাকসিন না পৌঁছালে আমরা একটি সত্যিকারের বিপর্যয়ের সাক্ষী হবো বলে মনে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শিশু ও রোগীদের রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইলের কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা উচিত নয়। গত ২ মার্চ ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধের কারণে গাজায় ভ্যাকসিনসহ সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশ আটকে গেছে এবং প্রায় ৬ লাখ ২ হাজার শিশু স্থায়ী পক্ষাঘাত এবং দীর্ঘস্থায়ী অক্ষমতার ঝুঁকিতে পড়ে গেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে গাজায় প্রথমবারের মতো ১০ মাস বয়সী এক শিশুর দেহে পোলিও ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপরই জরুরি ভিত্তিতে শুরু হয় ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচি। তিন ধাপে পরিচালিত এই কর্মসূচিতে প্রথমে ৫ লাখ ৬০ হাজার, দ্বিতীয় ধাপে ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৪ এবং তৃতীয় ধাপে আরও ৫ লাখ ৯০ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়া হয়।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, শিশুদের পোলিও ভাইরাস থেকে পূর্ণ সুরক্ষায় আনতে অন্তত দুটি মৌখিক টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক। অথচ চলমান সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা, ওষুধ ও খাদ্য প্রবেশে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাধার ফলে শুধু পোলিও নয়, আরও বহু সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে এমন মানবিক সংকট ঘিরে, তবে এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।