গাজা ভূখণ্ড জুড়ে রাতভর ইসরাইলের বোমা হামলায় আরও অন্তত ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফার বরাত দিয়ে সোমবার (৬ই নভেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সোমবার ভোরে গাজাজুড়ে ধারাবাহিক একের পর এক হামলায় কমপক্ষে ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে বার্তাসংস্থা ওয়াফা নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের তাল আল-সুলতান এলাকায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।

এছাড়া কেন্দ্রীয় গাজা উপত্যকার আল-জাওয়াইদায় আরও অন্তত ১০ জন নিহত এবং জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে হামলায় আরও দুজন নিহত হয়েছে।

আল জাজিরা বলছে, সোমবার ভোরে ও ভোরের আগে রাতের আঁধারে বোমা হামলার কারণে গাজার কিছু এলাকায় সেখানকার কর্তৃপক্ষ বা জরুরি পরিষেবার দলগুলো এখনও পৌঁছাতে পারেনি এবং এই কারণে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত ৩১ দিনে গাজা উপত্যকায় মোট ১৭৫ জন চিকিৎসা কর্মী এবং ৩৪ জন বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মী নিহত হয়েছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, একই সময়ে ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে বা জ্বালানি ও ওষুধের সংকটে ভূখণ্ডটির ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ১৬টি এবং ৭২টি ক্লিনিকের মধ্যে ৫১টি ক্লিনিক বন্ধ হয়ে গেছে।

এর আগে, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই পতনকে ‘বিপর্যয়’ হিসাবে অভিহিত করেছিলেন ফিলিস্তিনের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার ফ্রান্সেসকা আলবানিজ।

এদিকে গাজায় চলমান সংঘাতে জাতিসংঘের ৮৮ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। একক কোনও সংঘাতে এটিই সংস্থাটির কর্মীদের সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা।

জাতিসংঘ বলেছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর এখন পর্যন্ত ৮৮ কর্মী নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘ রোববার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেছে এবং এটিকে ‘একক কোনও সংঘাতে জাতিসংঘ কর্মীদের মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা’ বলে জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে চার হাজারেরও বেশি শিশু।

ইসরায়েলের এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরসহ বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে।

একইসঙ্গে গত ৮ অক্টোবর থেকে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধও আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল। এতে করে ফিলিস্তিনি নাগরিকরা খাদ্য, জ্বালানি, খাবার পানি ও ওষুধের সংকটে পড়েছেন।