ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধের ফলে গাজার শিশুরা চরম পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে পড়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির খাদ্য সহায়তা বিষয়ক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজায় পাঁচ বছরের নিচে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু এখন প্রাণঘাতী অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) আরও ৫ ফিলিস্তিনি না খেতে পেরে মারা গেছেন। এ অবস্থায় মিসর ও জর্ডান সীমান্তে প্রায় ২২ হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকলেও, ইসরায়েল সেগুলোকে গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর কর্মীরাও খাবার পাচ্ছেন না। তাদের অনেকে না খেয়ে রাত কাটাচ্ছেন।
ইউএনআরডব্লিউএর এক কর্মী মানার জানান, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ভাবি—আজ কী হবে জানি না। আমাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। তারপর থেকে কোনো নিরাপদ আশ্রয় পাইনি। সব সময় বোমা আতঙ্ক। আবার বাস্তুহীন হওয়ার ভয়। খাবার নেই, পানিও নেই।
সেভ দ্য চিলড্রেন-এর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, গাজা থেকে যে ক্ষুধার খবর আসছে, তা তাঁবুতে বোমা ফেলার মতোই ভয়ংকর। শিশুদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।
সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক আহমাদ আলহেনদাওয়ি বলেন, শিশুরা শুধু বোমার ভয়েই আতঙ্কিত নয়। যদি বেঁচে যায়, তাদের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করাও কঠিন হয়ে যাবে।
মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে ২২ হাজারেরও বেশি মানবিক ত্রাণবাহী ট্রাককে তাদের ভূখণ্ডে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। এটি ‘ক্ষুধা, অবরোধ এবং বিশৃঙ্খলা’র একটি পদ্ধতিগত অভিযানের অংশ।
এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘আমরা নিশ্চিত করছি যে গাজা উপত্যকার ক্রসিং গেটে বর্তমানে ২২ হাজারেরও বেশি মানবিক ত্রাণবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে, যার বেশিরভাগই জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসবিভিন্ন সংস্থার।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অনাহার, অবরোধ এবং বিশৃঙ্খলা তৈরির একটি পদ্ধতিগত নীতির অংশ হিসেবে দখলদার ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাকগুলো প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।’
মিডিয়া অফিস এই পরিস্থিতিকে ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং জানিয়েছে, ‘এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এবং গাজার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যার অপরাধে অবদান রাখে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা ইসরাইলি দখলদারিত্ব, নীরবতা বা সহযোগিতার মাধ্যমে জড়িত রাষ্ট্রগুলোকে ক্রমবর্ধমান মানবিক বিপর্যয়ের জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী করি।’
এছাড়া মিডিয়া অফিস আটকে থাকা সব ট্রাকগুলোর অবিলম্বে এবং নিঃশর্তে প্রবেশ, সীমান্ত ক্রসিং সম্পূর্ণরূপে পুনরায় খোলা এবং ‘অনেক দেরি হওয়ার আগে’ গাজার বেসামরিক নাগরিকদের কাছে নিরাপদে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।