গাজীপুরে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রাবেয়া আক্তার (২১) নামে এক কলেজছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে গৃহ শিক্ষক। হত্যাকাণ্ডে বাধা দেয়ায় ওই শিক্ষার্থীর মা ও তিন বোনকেও কুপিয়ে আহত করেছে সে। অপর তিন বোনও গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত সোমবার দিবাগত রাতে গাজীপুর মহানগরীর সালনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে আজ মঙ্গলবার।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম রাবেয়া আক্তার (২১)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ সালনা এলাকার আবদুর রউফের মেয়ে। নিহত রাবেয়া ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
রাবেয়া আক্তার ২০২০ সালে জয়দেবপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ছুরিকাঘাতে আহতরা হলেন রাবেয়ার মা ইনসুরেত নেছা (৫০), বোন হাবিবা (১৮), খাদিজা (১৫) ও জান্নাত (১৩)।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত গৃহশিক্ষক সাইদুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। তিনি টেকিবাড়ী সাকিনের টেকিবাড়ী জামে মসজিদের ইমাম ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার মহেশতারা গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার হোমনার শ্রীমতি এলাকার বাসিন্দা আবদুর রউফ গাজীপুর মহানগরীর সালনা বাজারে আরএফএল প্লাস্টিক শোরুমে চাকরি করেন। চাকরির কারণে তিনি পরিবার নিয়ে মহানগরীর সালনা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
তার ছোট দুই মেয়ে খাদিজা (১৫) ও জান্নাতকে (১৩) কোরআন শিক্ষার জন্য স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক সাইদুল ইসলামকে গৃহশিক্ষক নিয়োগ দেন। ওই শিক্ষক তাদের বাসায় গিয়ে ছোট দুই মেয়েকে পড়াতেন। এ ছাড়া সাইদুল পাশের টেকিবাড়ী সাকিনের টেকিবাড়ী জামে মসজিদে ইমামতি করতেন এবং সেখানে ছোট ছেলেমেয়েদের পবিত্র কোরআন শরিফ পড়াতেন।
সূত্রে আরও জানা গেছে, সাইদুল ইসলাম রাবেয়ার ছোট দুই বোনকে পড়ানোর জন্য বাসায় যাওয়া-আসার সুবাদে রাবেয়া আক্তারের দিকে তার কুনজর পড়ে। কিছুদিন পরে সাইদুল ইসলাম রাবেয়া আক্তারকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। এতে সাইদুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে বড় মেয়ে রাবেয়া আক্তারকে বিয়ে করার জন্য বিভিন্নভাবে প্ররোচনা দিতে থাকেন।
তার খারাপ উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে বাড়ির লোকজন তাকে বাসায় এসে পড়াতে নিষেধ করে। এরপর রাবেয়া কলেজে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে বাসার বাইরে যাওয়া-আসার পথে সাইদুল তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু তাতেও রাজি না হওয়ায় সাইদুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হন।
এরপর গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮ টার দিকে রাবেয়াদের বাসায় ঢুকে ধারালো ছুরি দিয়ে রাবেয়ার মাথায়, গলায়, হাতে, পায়ে এলোপাতাড়িভাবে কোপাতে থাকে। এ সময় তার ডাক-চিৎকারে রাবেয়ার মা ও বোন হাবিবা, খাদিজা দৌড়ে রাবেয়া আক্তারের ঘরে গিয়ে বাধা দিলে সাইদুল ছুরি দিয়ে অন্যদেরও আঘাত করে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গুরুতর অবস্থায় রাবেয়াকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাতেই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর দিকে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন রাবেয়ার মা। আহত রাবেয়ার ছোট দুই বোন।
গাজীপুর সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকালে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তাক্ত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামি সাইদুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।