প্রথম টেস্টের মতো দ্বিতীয় টেস্টেও গলার কাঁটা হয়ে থাকলো ব্যাটিং। পার্থক্য হলো প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ৫৩ রানে। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়ানডে মেজাজে রান তোলায় সফরকারী দল সবকটি উইকেট হারিয়ে করতে পারলো ৮০। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার কাছ থেকে বিশাল ব্যবধানে হারের লজ্জা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়নি। ৩৩২ রানের বিশাল হারে দুই টেস্টের সিরিজে দুটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ।

সিরিজ জেতায় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে দুুইয়ে উঠে গেছে প্রোটিয়ারা। তাদের অর্জন ৬০ পয়েন্ট। ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের অবস্থান অবশ্য আটে। ৬ টেস্টে একটি জয়ে তাদের সংগ্রহ মাত্র ১২ পয়েন্ট।

অথচ পোর্ট এলিজাবেথে দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিন খারাপ সংবাদ শুনে মাঠে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। করোনায় ‍দুই ক্রিকেটার উইয়ান মুল্ডার ও সারেল এরউই নামতে পারেননি। তাদের বদলে নামানো হয় কোভিড সাবস্টিটিউট। তার পরেও প্রোটিয়াদের মনোযোগ ছিল অটুট। প্রথম টেস্টের মতো শুরু থেকে বাংলাদেশের ব্যাটারদের দিশেহারা করে ছাড়েন বামহাতি স্পিনার কেশব মহারাজ। এই টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসেরও তিনি মূল হন্তারক। ৪০ রানে নিয়েছেন ৭টি উইকেট। ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন হারমার। ফলে চতুর্থ দিনের প্রতিরোধ টিকতে পারলো ঘণ্টাখানেক।

৪১৩ রানের লক্ষ্যে আগের দিন ২৭ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ এদিন নামে নতুন ব্যাটার মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে। সিমোন হারমারের অসম্পূর্ণ ওভারটির ৪ বলেই বিপদের সম্ভাবনা ছিল। একবার এলবিডাব্লিউর আবেদন নাকচ হলেও ক্যাচও উঠেছিল। এই ওভারে কোনওভাবে রক্ষা পাওয়া মুশফিক পরের ওভারে আর টিকতে পারেননি। কেশব মহারাজের ঘূর্ণি বলে স্লিপে সহজ ক্যাচে পরিণত হয়েছেন এলগারের। ফেরার আগে করতে পারেন মাত্র ১ রান।

এক ওভার বিরতি দিয়ে আবারও উইকেট শিকার করেন মহারাজ। এবার সাজঘরে মুমিনুল। বলতে গেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বিলাসী সুইপ শট করতে গিয়ে বল বাতাসে তুলে দিয়েছেন। স্কয়ার লেগে তার সহজ ক্যাচ লুফে নেন রিকেলটন। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬ রান করা বাংলাদেশ অধিনায়ক এই ইনিংসেও ফিরলেন মাত্র ৫ রানে।

উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার মানসিকতা দেখা গেলো পরের ব্যাটার ইয়াসির আলীর বেলাতেও। টেস্ট খেলা অথচ সেই মেজাজে খেললেন কই? বরং হারমারের বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন। তাতে রানের খাতা না খুলেই ফিরেছেন ইয়াসির।

লিটন কিছুক্ষণ থেকে শট খেলাতেই মনোযোগী থাকলেন। মেরেছেন ৫টি চার! ইনিংসের সর্বোচ্চ রানও বলতে গেলে তারই ২৭। ২১তম ওভারে উইকেটের বাইরে এসে খেলতে গিয়ে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনেন শেষ পর্যন্ত। স্টাম্পড হয়ে ফিরেছেন মহারাজের বলে। পরের ব্যাটার হিসেবে মিরাজেরও টিকে থাকার মানসিকতা দেখা যায়নি। বরং শট খেলার তাড়নায় মিরাজ গ্লাভসবন্দি হলে বাংলাদেশের ইনিংসের পরিসমাপ্তি হয় ত্বরান্বিত। লেজের দিকের ব্যাটাররা আর কী করবেন? দ্রুত সময়ে তারাও ফিরে গেলে বাংলাদেশ অলআউট ৮০ রানে রানে।

দ্বিতীয় টেস্টে ৯ উইকেটসহ পুরো সিরিজে ১৬ উইকেট। আর এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৮৪ রানের ইনিংস উপহার দেওয়ায় ম্যাচ আর সিরিজসেরা দুটোই হয়েছেন কেশব মহারাজ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: প্রথম ইনিংসে ১৩৬.২ ওভারে ৪৫৩ (মহারাজ ৮৪, এলগার ৭০, বাভুমা ৬৭, পিটারসেন ৬৪, রিকেলটন ৪২, মুল্ডার ৩৩; তাইজুল ৬/১৩৫, খালেদ ৩/১০০, মিরাজ ১/৮৫)।

বাংলাদেশ: প্রথম ইনিংসে ৭৪.২ ওভারে ২১৭ (তামিম ৪৭, শান্ত ৩৩, মুশফিক ৫১, লিটন ১১, ইয়াসির ৪৬; মুল্ডার ৩/২৫, হারমার ৩/৩৯, অলিভিয়ের ২/৩৯), মহারাজ ২/৫৭।

দক্ষিণ আফ্রিকা: দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৯.৫ ওভারে ১৭৬/৬ ডি. (এরউই ৪১, ভেরিয়েনে ৩৯*, বাভুমা ৩০, এলগার ২৬; তাইজুল ৩/৬৭, মিরাজ ২/৩৪, খালেদ ১/৩৮)

লক্ষ্য: ৪১৩, বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে: ২৩.৩ ওভারে ৮০ (লিটন ২৭, মিরাজ ২০, তামিম ১৩; মহারাজ ৭/৪০, হারমার ৩/৩৪)