চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল এবং কক্সবাজারে ঝিনুক আকৃতির আইকনিক রেল স্টেশনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুরে শনিবার (১১ নভেম্বর) কক্সবাজারে আইকনিক রেল স্টেশনে আয়োজিত সুধী সমাবেশে এই উদ্বোধন করেন তিনি।

আজ কক্সবাজার রেলপথ ছাড়াও জেলার মহেশখালীতে মাতারবাড়ীর বহুল প্রতীক্ষিত দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল উদ্বোধন করবেন।

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও কক্সবাজারের সঙ্গে রেল সার্ভিস চালু হতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে যাত্রীদের। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত হলেও আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করবে। এরপর রেলওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, কক্সবাজারের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। সে অনুযায়ী প্রতিদিন ১২টি ট্রেন ঢাকা-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করবে। পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোর গন্তব্য স্টেশন চট্টগ্রামের পরিবর্তে কক্সবাজার পর্যন্ত বর্ধিত করে ট্রেন সার্ভিস বাড়ানো, যাত্রীসেবা বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে পূর্বের দোহাজারী পর্যন্ত চলাচল করা লোকাল-মেইল ট্রেনগুলোর যাত্রাপথ কক্সবাজার পর্যন্ত বৃদ্ধি, চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মালবাহী ট্রেন সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ, ইঞ্জিন ও কোচ সংগ্রহসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

সারা দেশকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১০ সালের ৬ জুলাই দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাস হয়। এর পর কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও সেটি ভেস্তে যায়। পরবর্তী সময়ে ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার সরকারি পরিকল্পনায় কক্সবাজারে রেলপথ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আবার আলোচনায় ওঠে। দাতা সংস্থার অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ায় ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন দেয়া হয়। শুরুতে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ব্যয় পরিকল্পনা ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে। যদিও এ প্রকল্পের কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৫ হাজার ৪৭৬ কোটি ৩৬ হাজার টাকা। বাকি টাকা ব্যয় হবে ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রামু উপজেলা হয়ে মিয়ানমারের ঘুনধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে। দ্বিতীয় পর্বের ওই কাজটি আপাতত স্থগিত রয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ শিডিউল অনুযায়ী প্রতিদিন ১২টি ট্রেন চট্টগ্রাম ও ঢাকায় চলাচল করবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারে দুই জোড়া আন্তঃনগর, চট্টগ্রাম থেকে দুই জোড়া আন্তঃনগর এবং চট্টগ্রাম থেকে দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন চালানো হবে। তবে আগামী ডিসেম্বরে একটি ট্রেন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে। পর্যায়ক্রমে বিরতিযুক্ত আন্তঃনগর, লোকাল, মেইল, কমিউটার কিংবা এক্সপ্রেস সার্ভিস চালু করবে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ।