পদ্মা সেতুকে ‘গর্বের প্রতীক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন বাংলাদেশকে যথাযথ মূল্যায়ন করছে। তিনি বলেন, “এখন বাংলাদেশ শুনলেই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মানুষ সমীহ করে। বাংলাদেশের জনগণ একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বহু চ্যালেঞ্জ ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। একটি এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করা হয়েছিল। বিদেশিদের দিয়ে তদবির করা হয়েছিল। সব উপক্ষে করে দেশের টাকায় বাংলাদেশের আত্মসম্মান ও মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজের সমাপনী উপলক্ষ্যে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসবকথা বলেন।

আবেগ, স্বপ্ন আর সক্ষমতার এক নাম পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। দীর্ঘ ১০ বছরের কর্মযজ্ঞের পর পুরো প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে গেল জুন মাসে, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন লিমিটেড সেতু বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে পদ্মা সেতু।

এ উপলক্ষে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  সমাবেশ স্থলে এসে উপস্থিত হলে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

সমাবেশে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ছিলেন পদ্মা সেতু প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিক, মন্ত্রি, সংষদ সদস্য ও সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা।

বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগ আর স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু নিয়ে দেশি বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র ও তদবিরের ঘটনাবলী সবিস্তার তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আগে যারা কথায় কথায় আমাদের ওপর খবরদারি করতো; আর ভাবখানা ছিল যে, তারা ছাড়া বাংলাদেশ চলতেই পারবে না। তাদের সেই মানসিকতাটা বদলে গেছে। এখন বাংলাদেশ শুনলে সমীহ করে আন্তর্জাতিকভাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আয় দিয়ে পদ্মা সেতুকে বিচার করব না। এটা আমাদের গর্বের সেতু, টাকার অঙ্ক দিয়ে বিচারের নয়। এই একটা সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশকে সেই মর্যাদা দিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়নি, সফল হয়েছে। আমরা এখন আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তুলবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মাপাড়ের মানুষ আমরা সবসময় কষ্ট ভোগ করতাম, আসতে-যেতে। প্রথমে ১৯৫২ সালে দাদার সঙ্গে আমরা ঢাকায় যেতে নৌকায় পার হই এই পদ্মা। চার দিন চার রাত লেগেছিল। তখন আব্বা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) জেলে। এই যাতায়াতে কত মানুষের জীবন গেছে। বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আজকে আর কোনো সেবা বঞ্চিত হয় না।