সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের জনসেবায় আন্তরিকতার সঙ্গে আত্মনিয়োগ করে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
এসময় ডিসিদের কাজের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা পরিবর্তন দেখেছি আপনাদের মধ্যে। আমার বাবাও ক্ষমতায় ছিলেন, দেখেছি। আমি যখন বিরোধীদলে তখনও দেখেছি। ৮১ সালে সারাদেশ ঘুরেছি তখনও দেখেছি। আমি আসার পর কর্মকর্তাদের মধ্যে জনমুখী মনোভাব এবং মানুষকে সেবার দেওয়ার যে আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়েছে। এটা প্রশংসনীয়। আমরা তো জনপ্রতিনিধি, আমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসি। আমাদের মেয়াদ ৫ বছর।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের দায়িত্ব অনেক। শুধু চাকরি করা না, জনসেবা দেওয়া। এটা ছিল সংস্থাপন মন্ত্রণালয়। আমি নাম দিই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নামেরও একটা প্রভাব থাকে। আপনাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেছেন। দুর্যোগে মানুষের জন্য যে মানুষ, সেটা আপনারা প্রমাণ করেছেন। করোনায় আপনজন পাশে না থাকলেও আপনারা পাশে ছিলেন।
শ্বিব্যাপী মন্দার ধাক্কা যেন বাংলাদেশের উপর না লাগে সেজন্য সরকারের নেয়া সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের কার্যকর ভূমিকার রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা কালীন সময়ে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে মানুষের জন্য কাজ করেছেন আপনারা (ডিসি)। করোনা না এলে আমরা অনেক এগিয়ে যেতে পারতাম। বৈশ্বিক অর্থনীতিকে মন্দার সময়ে আমরা যদি সাশ্রয়ী হয়ে চলতে পারি, উন্নয়নের ধারা একটু ধীর গতি হলেও আমরা এগিয়ে যাব’।
তিনি বলেন, ‘আমি ক্ষমতায় আসার পর থেকে জনগণকে সেবা দেয়ার আন্তরিকতা তৈরি হয়েছে সবার মাঝে। মনুষ্য সৃষ্টির দুর্যোগ, গাছ কাটা, অগ্নি সন্ত্রাস করা, মানুষ পুড়িয়ে মারা তখনও আপনারা নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিজের অর্থে পদ্মা সেতু করেছি। পদ্মা সেতু করার একটা সিদ্ধান্ত বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়িয়েছে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই যে এলাকায় কোন প্রজেক্ট নেয়া হয় তা ওই এলাকার জন্য কতটা প্রযোজ্য, মানুষ কতটা লাভবান হবে এবং অপচয় কতটা বন্ধ হবে সেদিকে আপনাদের নজরদারি থাকা উচিত। কাজের মান তদারকি করার দায়িত্ব আপনাদের আছে, সেটা করবেন। প্রয়োজনে আমাকে বলবেন আমি ব্যবস্থা নেবো’।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দিয়েছি, সে ব্যাপারে আপনারাও সচেষ্ট থাকবেন। আর্থিক সংকট বিশ্বব্যাপী আছে আমাদেরও আছে। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এতটা সংকটে নেই। এই মুহূর্তে আমাদের ইভিএম অগ্রাধিকার নয়। অগ্রাধিকার হচ্ছে মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করা, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা। সেজন্য ইভিএমের ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব বাদ দিয়েছি’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন হয়, সেগুলো যাতে সেই এলাকায় সংরক্ষণ করতে পারি। তাহলে বাংলাদেশ খাদ্যের অভাব হবে না, বিদেশে পাঠাতে পারব। একটা কার্গ বিমান কিনব, যাতে আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। সড়ক, রেল ও বিমান পথে সেই ব্যবস্থা করবো। স্মার্ট বাংলাদেশ করব’।
তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদনে লক্ষ্য রাখতে হবে, অনাবাদী জমি যাতে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয় হতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে সরকারি অফিসে সহজে সেবা পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপপ্রচার গুজব রোধে উদ্যোগ নিতে হবে, গুজব ছড়িয়ে কেউ যাতে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মাদক, জঙ্গী, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
এর আগে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলের ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ, নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি।