জাতিসংঘে রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার পথ আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিতে ভেটো দিয়েছে দেশটি।

খসড়া প্রস্তাবটিতে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রতি সুপারিশ করা হয়েছিল। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের ১২টি এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড। ভেটো প্রদান করে আমেরিকা।

নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য আমেরিকা, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া এবং চীন। কোনও প্রস্তাব পাস করাতে হলে নিরাপত্তা পরিষদের অন্তত নয়টি সদস্য দেশকে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে হয়। স্থায়ী সমস্ত দেশকে প্রস্তাবের পক্ষে থাকতে হয়। একটি দেশ ভেটো দিলে প্রস্তাব পাস হয় না।

শুধু তা-ই নয়, নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস হলে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেলে তবেই ফিলিস্তিন জাতিসংঘের সদস্য হতে পারবে। এখন তারা কেবলই অবজারভার হিসেবে সেখানে আছে।

ভোটের পর জাতিসংঘের মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘ভাবনা ভালো ছিল। কিন্তু এদিনের প্রস্তাব সময়ের আগেই নেওয়া হয়েছে। এভাবে ফিলিস্তিনকে সদস্য় করা সম্ভব নয়।’

ভোটের আগে আমেরিকার মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, আমেরিকা চায় ফিলিস্তিন আলাদা রাষ্ট্রের সম্মান পাক। কিন্তু সেই আলোচনা সরাসরি ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের সদস্যদের একসঙ্গে বসে করতে হবে। আমেরিকা সেখানে মধ্যস্থতা করতে পারে মাত্র।

এদিকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার জন্য ফিলিস্তিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া।

জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ভেটো প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র দেখিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে তারা আসলে কী ভাবে।

তিনি আরও বলেন, ওয়াশিংটন মনে করে, ফিলিস্তিনিরা নিজস্ব রাষ্ট্র পাওয়ার যোগ্য নয়। এটি কেবল ইসরাইলের স্বার্থই উপলব্ধি করতে পারে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেন, ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন স্পষ্ট বলেছেন, এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি কেবল ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চয়তাসহ একটি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে। গণতান্ত্রিক ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয়, এমন অন্য কোনো পথ নেই।

তিনি বলেন, আবেদনকারী একটি রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচিত হওয়ার মানদণ্ড পূরণ করে কিনা, তা নিয়ে অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়েছে।

এদিকে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্সিও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্সি বলেছে, মার্কিন ভেটো অন্যায্য, অনৈতিক ও অযৌক্তিক।

উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে অসলো চুক্তিতে ফিলিস্তিনকে নিজস্ব প্রশাসন ও সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের রাষ্ট্রের সম্মান দেওয়া হয়নি। তবে ভবিষ্য়তে যাতে তারা রাষ্ট্রের সম্মান পেতে পারে, সেই রাস্তা তৈরি করে রাখা হয়েছিল।