যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার (১৫ই আগস্ট) সন্ধ্যা সাতটায় মিশনস্থ বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস পালন অনুষ্ঠান আয়োজন করে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন।

আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি সরকারি সফরে নিউইয়র্ক অবস্থান করছেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধাগণ, এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় দিবসটির কর্মসূচি। এরপর জাতির পিতা, বঙ্গমাতা এবং তাঁদের শহীদ পরিবারবর্গসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এসময় স্পীকারের সাথে ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিতসহ মিশনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ। অতপর দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। জাতির পিতার জীবন ও কর্মের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য ভিডিও প্রদর্শন করা এ পর্বে। এর পর শুরু হয় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা। এতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও মুক্তিযোদ্ধাগণ বক্তব্য প্রদান করেন।

স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে তরুন সমাজ বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।

স্পীকার বলেন, “জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে তরুন সমাজ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিবে, আজকের দিনে এই হোক আমাদের প্রত্যয়” আজ জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী পালন উপলক্ষে নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। উল্লেখ্য তিনি সরকারি সফরে নিউইয়র্ক অবস্থান করছেন।

এসময় জাতির পিতার শৈশব ও কৈশরসহ তাঁর পরিবারের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সূদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের নানাদিক তুলে ধরেন তিনি। দুঃখ-দূর্দশাগ্রস্থ ও অসহায় মানুষের প্রতি জাতির পিতার গভীর মমত্বের কথা উলে­খ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা ছিলেন বিশ্বের শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির অগ্রনায়ক। সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্থ একটি দেশের ভগ্নস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে কীভাবে জাতির পিতা বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করতে চেয়েছিলেন তা তুলে ধরেনে স্পীকার।

তিনি বলেন, জাতির পিতার সেই আদর্শ ধারণ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। আমরা আজ স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটেগরি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হয়েছি। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, দারিদ্র্য বিমোচন, বিদ্যুৎ, বৈদেশিক সম্পর্কসহ প্রতিটি সেক্টরে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। পদ্মাসেতুসহ বিভিন্ন মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের উদাহরণ তুলে ধরে স্পীকার বলেন, জাতির সকল উন্নয়নে জাতির পিতা আছেন এবং চিরদিন থাকবেন। এসডিজি’র উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এর অনেকগুলো লক্ষ্য ও অভীস্টের কথা জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে উল্লেখ করে গেছেন।

নিউইয়র্ক সফররত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশিদ আলম প্রদত্ত বক্তব্যে স্বাধীনতার পর চট্টগ্রাম বন্দর সচল করার ক্ষেত্রে জাতির পিতার দূরদর্শীতার কথা তুলে ধরেন।

জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য এবং জাতির পিতার জীবনাদর্শ তুলে ধরে স্বাগত ভাষণ দেন রাষ্ট্রদূত মুহিত। তিনি ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে দেওয়া জাতির পিতার ভাষণের অংশবিশেষ -“মানব জাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি একান্ত দরকার। এই শান্তির মধ্যে সারা বিশ্বের সকল নর-নারীর গভীর আশা-আকাক্সক্ষা মূর্ত হয়ে রয়েছে। ন্যায় নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত না হলে শান্তি কখনো স্থায়ী হতে পারে না” উদ্বৃত করেন। স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, জাতির পিতার কালজয়ী সেই ভাষণের মর্মবাণী এবং তাঁর নীতি-আদর্শ অনুসরণ করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বশীল ভূমিকা রেখে চলেছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ দণ্ডপ্রাপ্ত খুনীদের মধ্যে যারা এখনও বিদেশে অবস্থান করছেন তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তারা বলেন, “আমরা চাই জাতির পিতার কোনো খুনীই যেন বিচারের হাত থেকে পার না পায়”। বক্তাগণ পনের আগস্টের এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করার মাধ্যমে জাতির পিতা যে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন স্ব স্ব অবস্থান থেকে তা অর্জনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সবশেষে ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।