শুরু হলো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষেদের ৭৬তম অধিবেশন।  স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে শুরু হওয়া অধিবেশন চলবে আগামী ২৭শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

রীতি অনুযায়ী, এবারের অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা শহিদের হাতে গ্যাভেল বা শৃঙ্খলার প্রতীক হাতুড়ি তুলে দেন ৭৫তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির। এ সময় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর করোনা মহামারি বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে। এই মহামারি কোটি কোটি মানুষকে ভয়াবহ দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বৈষম্য আরও প্রকট হয়েছে।’ এই দুর্যোগময় কঠিন সময়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির দৃঢ় নেতৃত্বের প্রশংসা করেন তিনি।

এবারের অধিবেশনে সহ-সভাপতি বাংলাদেশ। স্বল্প পরিসরে হলেও এবারের অধিবেশনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক যাওয়ার কথা রয়েছে তার। ২৪ সেপ্টেম্বর ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

সাধারণ পরিষদের সভাপতি এবং জাতিসংঘ মহাসচিব জলবায়ু সংকট, সংঘর্ষ এবং কভিড-১৯ এর এই চ্যালেঞ্জিং বছর মোকাবেলায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আশা ও ঐক্য জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন।

৭৬তম অধিবেশনের সভাপতি আবদুল্লা শহিদ বলেছেন, এটি একটি পীড়াদায়ক ও চ্যালেঞ্জের বছর। তিনি নানা ধরণের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বিশ্বের কোটি কোটি লোক অসুস্থ হয়েছে। লাখ লাখ লোক মারা গেছে। কোটি কোটি লোক মহামারির করুণ শিকারে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ, সংঘর্ষ এবং অস্থিতিশীলতার কারণে বিশ্ব জুড়েই উদ্বেগ রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমাদেরকে নতুন অধ্যায় শুরুর পথ বেছে নিতে হবে। আমাদেরকে আশা রাখতে হবে। পরিস্থিতির অবশ্যই পরিবর্তন আসবে। আর এ পরিবর্তনের জন্যে আমাদেরকে অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, ‘যে কোন দিক থেকেই দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকে বিশ্ব সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। মানব সভ্যতার অদৃশ্য শত্রু মহামারি করোনা। এখন সময় তাকে মোকাবেলা করার। আমি মনে করি- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সকল চ্যালেঞ্জই এক হয়ে সমাধান করতে পারবে।’

বিশেষ করে কভিড-১৯ এর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সকলের জন্যে টিকা দেয়ার গতি এবং চিকিৎসা সুযোগ বাড়িয়ে আমাদেরকে এই শত্রু মোকাবেলা করতে হবে।

বিশ্ব যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে তা প্রকৃতিগত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব মানুষের তৈরি। তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক পদ্ধতিকে ধনী দরিদ্রের বিভাজনের জন্যে দায়ী করে বলেন, মানুষের মাত্রাতিরিক্ত লোভ এই গ্রহকে ধ্বংস করছে।

গুতেরেস বলেন, কাজের মাধ্যমে আমাদের ঐক্য এবং বহুমুখী চেতনার মাধ্যমে আমরা এইসব চ্যালেঞ্জ ও বিভাজন দূর করতে পারি।

বিদায়ী সভাপতি ভলকান বজকির টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানান। তিনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং এই গ্রহবাসীর জন্যে নীল নকশা হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, দিন দিনই বিশ্বায়ন আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা পরষ্পর যুক্ত এবং নির্ভরশীল হচ্ছি। তাই জাতীয়তাবাদী সমাধান দিয়ে আমরা আমাদের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করতে পারবো না।