জাতীয় পার্টি এখন চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির একাংশের চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) গুলশানে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে রওশন এরশাদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এবং পার্টিকে আবার সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে নেতা-কর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে আমি দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। এছাড়া আগামী ৯ মার্চ পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল ঘোষণা দিয়েছি।

৭ জানুয়ারির ওই নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে নতুন করে বিভক্তি দেখা দেয়। দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধে গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন নিজে এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। তার অনুসারীদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি।

নির্বাচনের পর পার্টি থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়, যারা রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত। এরপর গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ এনে ৬৭১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

সেই প্রেক্ষাপটে গত ২৮ জানুয়ারি এক মতবিনিময় সভায় রওশন নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে ‘অব্যাহতি’ দেন। তবে রওশনের ওই দাবি ‘আমলে নেননি’ জিএম কাদের বা চুন্নু।

এরমধ্যে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে জিএম কাদেরকে এবং উপনেতা হিসেবে কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে স্বীকৃতি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

রোববারের সংবাদ সম্মেলনে রওশন বলেন, “কাজী ফিরোজ রশীদ এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ পার্টির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতৃবৃন্দ এবং এরশাদভক্ত সর্বস্তরের অগণিত নেতা-কর্মীরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা সবাই মিলে সুন্দর একটি জাতীয় সম্মেলন উপহার দিয়ে জাতীয় পার্টিতে আবার প্রাণশক্তি ফিরিয়ে আনতে চাই। কারণ দেশ ও জাতির জন্য রাজনীতির অঙ্গনে জাতীয় পার্টির প্রয়োজনীয়তা এখন অপরিহার্য।”

দেশে গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক ভীত শক্তিশালী করার জন্য জাতীয় পার্টি ‘সংগ্রাম করে যাচ্ছে’ দাবি করে রওশন বলেন, “একটি রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র চর্চার প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে সময় মত পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠান। জাতীয় পার্টির সম্মেলন আয়োজনের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের যে ঘোষণা দিয়েছি সেই সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমি একটি সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছি।“

রওশান সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যদের নামও ঘোষণা করেন। সেখানে আহ্বায়ক করা হয়েছে কাজী ফিরোজ রশীদকে। সহ-আহ্বায়ক সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, যুগ্ম-আহ্বায়ক হয়েছেন গোলাম সরোয়ার মিলন, সদস্য সচিব হলেন সফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন জিয়াউল হক মৃধা।

এছাড়া জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব, প্রেসিডিয়াম সদস্য, উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, যগ্ম-মহাসচিব, সম্পাদকমণ্ডলী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা কমিটির সভাপতি বা আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব ক্রমানুসারে সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।