দশম পণ্য হিসেবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ পেয়েছে বাগদা চিংড়ি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার জনেন্দ্র নাথ সরকার স্বাক্ষরিত ভৌগলিক নির্দেশক নিবন্ধন সনদে ‌‘বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি’কে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

সম্প্রতি দেওয়া এই স্বীকৃতি সনদে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যায়ন করা যাচ্ছে যে, ভৌগলিক নির্দেশক নিবন্ধন বইতে মৎস্য অধিদপ্তরের নামে ২৯ ও ৩১ শ্রেণিতে জিআই-১১ নম্বরে বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি পণ্যের জন্য ০৪.০৭.২০১৯ থেকে নিবন্ধিত হলো।’

আন্তর্জাতিক বাজারে বাগদা চিংড়িকে বাংলাদেশের বিশেষায়িত পণ্য হিসেবে তুলে ধরতে ২০১৯ সালে ৪ জুলাই মাসে মৎস্য অধিদফতরের জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে যাছাই বাছাই শেষে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর জার্নাল প্রকাশ করে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর।

নিয়ম অনুসারে জার্নাল প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে কেউ আপত্তি না করলে সেই পণ্যের জিআই সনদ দেওয়া হয়। বাগদা চিংড়ির ক্ষেত্রে এ সময়সীমা গেল ৬ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কেউ আপত্তি না করায় এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

প্রায় ১০০ বছর আগে বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় কালো ডোরাকাটা বাগদা চিংড়ির চাষ শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের ব্ল্যাক টাইগার চিংড়ির উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বাণিজ্যিক ও রফতানিমুখী একটি কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। চিংড়ি চাষের এলাকাও বিপুলভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। বিগত ১৯৮৩-৮৪ সালের ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হতো। ১৯৯৫-৯৬ সালে এ এলাকা বেড়ে এক লাখ ৪০ হাজার হেক্টর এবং ২০১৫-১৬ সালে প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।

একই সময়ে দেশের চিংড়ি উৎপাদনের পরিমাণও বেড়েছে। ১৯৮৩ সালে দেশে উৎপন্ন ব্ল্যাক টাইগার চিংড়ির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২২০ মেট্রিক টন, যা ১৯৯৫-৯৬ সালে ৫৭ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৬-১৭ সালে ৬৮ হাজার ৩০৬ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোয় বাগদা চিংড়ি চাষ হয়। চিংড়ি উৎপাদনকারী এলাকাগুলোয় ও চিংড়ি খামারের অধিকাংশই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুলনা, বাগেরহাট  ও সাতক্ষীরা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত।

উল্লেখ্য, জিআই হচ্ছে একটি প্রতীক বা চিহ্ন। এটি পণ্য ও সেবার উৎস, গুণাগুণ ও সুনাম ধারণ ও প্রচার করে। কোনো দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ যদি কোনো পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো গুরুত্ব রাখে, সেই দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে যদি বিষয়টি সম্পর্কিত হয়, তাহলে সেটাকে সে দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।