সাগরের পানি বাড়ায় কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই ৮ থেকে ১০টি স্থানে বেশকিছু সড়ক বিলীন হয়েছে ভাঙনে। পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে সমুদ্রের পানি বাড়ার কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ভাঙন দেখা দেয় সড়কটিতে।
ভেঙে যাওয়া অংশ দ্রুত মেরামত করা না হলে মেরিন ড্রাইভ সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু বলে জানিয়েছেন সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ সেলিম।
তিনি বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে দৃষ্টিনন্দন এই সড়কটির অন্তত ১০টি স্থানে ছোট-বড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত মেরামত করা না হলে ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করে এই সড়ক দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের পশ্চিম মুন্ডার ডেইল এলাকার প্রায় ৬০ মিটার সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙে গেছে। এছাড়া দুদিনে টেকনাফের বাহারছড়া, হাদুরছড়া, দক্ষিণ মুন্ডার ডেইল এলাকায় ১০টি স্পটে মেরিন ড্রাইভে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফের সাবরাং জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়কটি দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একটি বিশেষ ইউনিট। যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেখানে গতকাল সন্ধ্যা থেকে মেরামত কাজ শুরু করেছেন ওই ইউনিটের সদস্যরা।
গতকাল দুপুরে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়া ঘাট থেকে হাদুরছড়া বিজিবি ক্যাম্পসংলগ্ন শ্মশান পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটারে ১০-১২টি স্থানে সড়ক ও পাশের ঝাউবাগানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঢেউয়ের আঘাতে সড়কের কিছু অংশ সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার দৃশ্যও চোখে পড়ে। এ সময় কয়েকটি উপড়ে পড়া ঝাউগাছও দেখা যায়। ভাঙন দেখতে আশপাশের লোকজন মেরিন ড্রাইভ সড়কে ভিড় করেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সড়ক রক্ষাকবজ জিও ব্যাগ দুর্বল হয়ে গেছে। এরই মধ্যে সড়কটিকে গ্রাস করছে সমুদ্র। এছাড়া আইন অমান্য করে মেরিন ড্রাইভ সড়কের একদম পাশ থেকে অনেকে বালি তুলে জমি ভরাট করেছেন। এ কারণে সাগরে সামান্য পানি বাড়লেও এ সড়কে ভাঙন দেখা যায়।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘পূর্ণিমার প্রভাবে সাগরের জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি। মেরিন ড্রাইভের সাবরাং বাহারছড়া ঘাট মুন্ডার ডেইল, হাদুরছড়া ও পশ্চিম মুন্ডার ডেইল এলাকার বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে ভাঙন রোধে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে। দ্রুত সময়ে এ সমস্য সমাধান হবে।’
উল্লেখ্য, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ধরে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে ওঠা ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উদ্বোধন হয় ২০১৭ সালের ৬ মে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তবে ১৯৯১-৯২ সালে সড়ক প্রকল্পটি গ্রহণের পর থেকেই নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন হলেও নির্মাণ তদারক ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল কোর। নয়নাভিরাম সড়কটি দেশের পর্যটন শিল্পের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।